রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল। গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজি বিক্রির পর চলতি সপ্তাহে দাম আরও কমেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বিভিন্ন সবজির দাম।
চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, ‘গতকালও মরিচ ১০০ টাকা কেজি বেচছিলাম স্যার। আইজক্যা বেচছি ৫০ টাকা। কেউ ৬০, ৮০ টাকা বেচতেছে। কাঁচামালের দামে ঠিক নাই। একেকজন একেক রকম বিক্রি করে।’
বাজারে নতুন আসায় গত সপ্তাহে শিম সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। কেজি ছাড়িয়েছিল ২০০ টাকা। এটির দাম কমে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শিমের মতোই কম দামে বিক্রি হচ্ছে টম্যাটো, গাজর ও শসা। টম্যাটো ১৩০ টাকা থেকে কমে ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা থেকে কমে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কেজিতে ১০ টাকা কমে রকমভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
অন্যান্য সবজি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। বেগুন ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, যেখানে গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৬০ টাকা।
অন্য সবজির মধ্যে কাঁকরোল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির পটল আজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, ঢ্যাঁড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি লাউ রকমভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, ‘পটুয়াখালী, রাজশাহী, সাভার—এসব অঞ্চল থেকে প্রচুর সবজি আমদানি হইতাছে। সবচেয়ে বেশি আসতেছে সাভারের মাল। এ জন্য দাম একটু কমছে।’
সামান্য দাম কমায় সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। জানতে চাইলে ক্রেতা আমান বলেন, ‘কই আর কম?’
আদা ও রসুন ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে কয়েক টাকা কমেছে আলু ও পেঁয়াজের দাম, তবে পাইকারিতে আদা-রসুনের দাম বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি করছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও আজকে ৪০ টাকা কেজি। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, যা ৩০ টাকা ছিল, তবে পাল্লা (পাঁচ কেজি) কিনলে আরও এক টাকা কম পড়ছে।’
বিভিন্ন বাজারে দেশি মসুর ডালের কেজি ১৩০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
দাম বাড়ল খোলা আটার
বাজারে খোলা আটার দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বলছে, বৃহস্পতিবার বাজারে খোলা আটার দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি।
বিপণনকারী দুই-একটি কোম্পানি আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১২৫ টাকা। এর আগে আটার দুই কেজির প্যাকেটের খুচরা দর ছিল সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা। সেই হিসাবে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বাজারে আটার দুই কেজির প্যাকেটের দাম ছিল ১০৪ টাকার আশপাশে। সে হিসাবে দাম বাড়ল প্রতি কেজিতে ১০ টাকার মতো।
শুক্রবার বিক্রেতারা জানান, খোলা আটা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়।
বাড়ছে তেলের সরবরাহ
মঙ্গলবার নতুন দাম কার্যকর করার পরের দিন বাজারে বাড়ছে ভোজ্যতেলের সরবরাহ। নতুন করে চাহিদা নিচ্ছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। সব পর্যায়ে নেয়া হচ্ছে তেলের চাহিদা।
ডলারের বাজারে অস্থিরতার কথা বলে গেল ৩ আগস্ট বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও উৎপাদক সমিতি। ২০ দিন পর লিটারে সর্বোচ্চ ৭ টাকা বাড়াতে সম্মতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন দাম অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৪৫ টাকায়। পাম তেল লিটারপ্রতি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া মজুত থাকায় অনেক জায়গায় দোকানিরা কম দামেই সয়াবিন বিক্রি করছেন।
কমল ডিম ও মুরগির দাম
ডিমের দাম কমেছে অনেকটাই। বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের প্রতি হালির দর নেমেছে ৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
কমেছে ব্রয়লার মুরগির দামও। বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগে ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। অবশ্য এই মুরগি সাধারণত ১৪০ টাকা কেজির আশপাশে বিক্রি হয়।
সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয় এ মুরগি।
লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে।
বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়।
মুরগি বিক্রেতা লিটন বলেন, ‘মুরগির দাম বাড়বে না কমবে তা বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে যে জিনিসের দাম বাড়ে তা আর কমে কই?’
গত সপ্তাহেই রকমভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দাম বাড়ে ইলিশের। বাজারে ওজনভেদে ইলিশের কেজি বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। এ ছাড়া রকমভেদে রুই ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা, কই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
চালের দামও কম
এদিকে বাজার মনিটরিং করায় চালের দাম কমেছে বলে জানা গেছে। কারওয়ান বাজারের ‘আল্লাহর দান রাইস’ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আউয়াল তালুকদার নিউজবাংলাকে জানান, প্রতি কেজি মিনিকেট আগের মতো ৭৩ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমেছে আটাশ চালের। ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর আগে দাম বেড়ে তা ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। নাজিরশাইল চালের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া কেজিতে দুই-এক টাকা কমেছে অন্যান্য চালের দাম।
আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকার মনিটরিং করছে, যার কারণে কিছুটা দাম কমেছে, কিন্তু যতটা বেড়েছিল, ততটা নয়। মিলার, মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণেই চালের দাম এত বেড়েছিল।
‘কয়েক মাসে বস্তাপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বাড়িয়েছে, কিন্তু বস্তাপ্রতি কমিয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কোনো জায়গায় হয়তো তার চেয়ে একটু বেশি।’