বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডলারের উত্তাপ রডের বাজারেও

  •    
  • ২৬ আগস্ট, ২০২২ ১১:১০

মিলমালিকরা বলছেন, আগে প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হতো। ডলার সংকটের কারণে সেটি ১১০ টাকায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে কাঁচামালের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

ডলার সংকটের কারণে নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম উপকরণ রডের বাজার আবার গরম হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে এক টন রডের দাম ছিল ৮৬ থেকে ৮৭ হাজার টাকা। বাজারভেদে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৯৩ থেকে ৯৫ হাজার টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে এবং দেশে ডলারের দাম সহনীয় না হলে রডের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।

রডের বাজারে অস্থিরতা চলছে এক বছর ধরে। ডলার সংকট তাকে আরেক দফা উসকে দিয়েছে।

রডের প্রধান কাঁচামাল আমদানিনির্ভর, যে কারণে ডলার দামি হলে রডের বাজারে সরাসরি প্রভাব পড়ে।

এক বছরে রডের দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে এত বেশি রডের দাম আর কখনই বাড়েনি।

নির্মাণের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় রডের পেছনে। সে জন্য পণ্যটির দাম বাড়লে এই শিল্পে খরচ বেড়ে যায়।

ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য সরকারি অনেক বড় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করে দেয়ায় রডের চাহিদা এখন কিছুটা কমে গেছে। তবে সামনে শুষ্ক মৌসুম আসছে। তখন এর চাহিদা বাড়বে।

রাজধানীর নতুন বাজার এলাকার রডের ডিলার আশরাফউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানি ঈদের আগে যে দামে রড বিক্রি হতো, এখন তার চেয়ে ১০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বেশি টাকা দিয়ে মিলমালিকদের কাছ থেকে রড কিনতে হচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।’

রডের প্রধান কাঁচামাল পুরোনো লোহালক্কড় বা স্ক্র্যাপ আমদানি করে বিলেট তৈরি করে সেটি রি-রোলিং মিলে গলিয়ে রড তৈরি করা হয়। ৮০ শতাংশ স্ক্র্যাপ আমদানি করা হয়। বাকি ৩০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় অভ্যন্তরীণভাবে। ভাঙারি ব্যবসায়ী ও পুরাতন জাহাজ কেটে তা থেকে স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করা হয়।

দেশে রি-রোলিং মিলের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি। এর মধ্যে বড় আকারের ৫০টি। বাকিগুলো ছোট ও মাঝারি।

মিলমালিকদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বার্ষিক রডের চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি উন্নয়নকাজে ব্যবহার হয় ৬০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ বেসরকারি খাতে।

মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে কাঁচামাল স্ক্র্যাপের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হতো। ডলার সংকটের কারণে সেটি ১১০ টাকায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে কাঁচামালের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ডলার দুষ্প্রাপ্যতার কারণে নতুন এলসি খুলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মিলমালিকদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বার্ষিক রডের চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টন। ফাইল ছবি

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ স্টিল মিলস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাসাদুল আলম মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, লোডশেডিং ও গ্যাস সরবরাহসহ নানামুখী সমস্যার কারণে অস্বস্তিতে আছি আমরা। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে রডের বাজার সহসাই সহনীয় হচ্ছে না।’

করোনা-পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ ডলারে ঠেকে। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ ডলারে।

মাসাদুল আলম জানান, বিশ্ববাজারে যখন কাঁচামালের দাম কম ছিল, ডলার সংকটের কারণে এলসি করা যায়নি। নতুন এলসিতে কাঁচামাল আনলে খরচ আরও বাড়বে।

দেশে রডের প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানি করা হয় মূলত ইউরোপ ও রাশিয়া থেকে। ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার ফলে ওই সব দেশ থেকে কাঁচামাল আনতে পারছে না বাংলাদেশ।

কিছু কাঁচামাল চীন থেকে আনা হতো। পরিবেশ দূষণ বন্ধে সম্প্রতি কাঁচামাল উৎপাদন বন্ধ করে দেয় চীন। এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে কাঁচামাল আনত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপও সেসব দেশ থেকে নিচ্ছে। ফলে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

রডের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সেসব দেশে থেকে আনতে পারছে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট। এসব কারণে রডের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর