প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সফরটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত সফর উপলক্ষে বাণিজ্য ইস্যুতে সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে পুরোনো কিছু বিষয়ও আলোচনার টেবিলে উঠে আসবে।
সম্ভাব্য আলোচ্যসূচির মধ্যে অ্যান্টি-ডাম্পিং প্রত্যাহার, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগের বাধা দূর করা, কাস্টমস রুলস শিথিল করা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে বেসরকারি পর্যায়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা অন্যতম।
জানা যায়, বাণিজ্য ইস্যুতে এবারের বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে প্রস্তাবিত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট-সেপা) চুক্তি। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া সেপা চুক্তির বিষয়ে এ বৈঠক থেকে বড় ধরনের অগ্রগতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেপা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও সেবার ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘ভারত তাদের বাজারে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও নন-ট্যারিফ বাধার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে না। সেপা চুক্তির সাফল্য পেতে হলে নন-ট্যারিফ শুল্ক সমস্যায় মনোযোগ দিতে হবে।’
বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতে রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অতিমাত্রায় অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ভারত সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেকবার এই শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি সত্ত্বেও তা প্রত্যাহার করেনি ভারত।
পাঁচ বছর ধরে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক ছাড়াও যৌথ বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশ এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এলেও ভারতের অবস্থান অনড়। বরং অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরও পাঁচ বছর অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ভারত সরকার।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য গত পাঁচ বছরে ভারতের সঙ্গে অনেক আলোচনা হলেও সুফল পাওয়া যায়নি। এতে দেশের পাট খাত খুব খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, দুই দেশের সরকারপ্রধানের আসন্ন বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ভারতের কাস্টমস রুলসের কিছু বিধিনিষেধের কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অ্যান্টি ডাম্পিং প্রত্যাহারের জন্য মোদি সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে।
দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন যে নিয়ম আছে, তাতে ভারতের কোনো উদ্যোক্তা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে সরকারের কোনো অনুমোদন লাগে না। কিন্তু বাংলাদেশি কোনো উদ্যোক্তা ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইলে সে দেশের সরকারের অনুমতি নিতে হয়।
সূত্র বলেছে, আসন্ন বৈঠকে এই বিধিনিষেধ তুলে নিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। আর তাহলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগের দুয়ার আরও উন্মুক্ত হবে।
বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে (বিজনেস টু বিজনেস কমিউনিকেশন) প্রধান নির্বাহী কর্মকতাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকের আয়োজন করারও প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া বৈঠকে বাণিজ্য বাড়াতে আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করার ওপর প্রাধান্য দেয়া হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে।