বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক দিন জিরিয়ে ফের লাফ, বছরের দ্বিতীয় সেরা লেনদেন

  •    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২২ ১৪:০২

টানা ছয় দিন উত্থানের পর বুধবার সংশোধনে সূচক কমে ৩৫ পয়েন্ট, লেনদেন কমে ৩৫৩ কোটি টাকা। সেটি উসুল হয়ে বৃহস্পতিবার সূচক বেড়েছে ৭৪ পয়েন্ট, লেনদেন হয়েছে পৌনে দুই হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর এর চেয়ে বেশি লেনদেন কেবল গত ১১ জানুয়ারি হয়েছে।

টানা ছয় কর্মদিবস উত্থানের পর একদিনের বিশ্রাম নিয়ে নতুন করে শক্তি দেখাল পুঁজিবাজার। সংশোধনে সূচক যতটা পড়েছিল, উত্থানে বেড়েছে তার দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংশোধনে যাওয়া পুঁজিবাজারে প্রায় সব দাবি পূরণ, বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আলোচনাসহ নানা কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। সক্রিয় হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও। আর দীর্ঘ প্রায় এক বছরের ঘুম কাটিয়ে জেগে উঠেছে পুঁজিবাজার।

গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস থেকে পুঁজিবাজারে উত্থান শুরু হয়। এর মধ্যে ছয় কর্মদিবসে সূচক বাড়ে ১৬৭ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে গত দুই কর্মদিবসে লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই হয়ে যায়, যা ছিল গত সাত মাসের সর্বোচ্চ।

তবে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর এমডি তা আমিন ভূঁইয়ার পদত্যাগের পাশাপাশি টানা উত্থানের পর বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় বুধবার ডিএসইতে ঘটে দরপতন। ৩৫ পয়েন্ট সূচকের পতনের পাশাপাশি লেনদেন কমে যায় ৩৫৩ পয়েন্ট।

তবে এই পতনের পুরোটাই বলতে গেলে উসুল হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার। এদিন সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে সূচকে যোগ হয় ৭৪ পয়েন্ট। আর লেনদেন ছাড়ায় এক হাজার সাত শ কোটির ঘর, যা চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থান।

বেলা শেষে লেনদেন হয় এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৪৫ লাখ ২৭ হাজার টাকার, যা আগের দিন ছিল এক হাজার ১৩৩ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

চলতি বছর সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় গত ১১ জানুয়ারি। সেদিন হাতবদল হয় ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

এদিন লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা কেবল বাড়তেই থাকে। শেষ পর্যন্ত ২৩০টি কোম্পানির দর বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৫৮টির দর আর অপরিবর্তিত থাকে ৯১টির দর।

বেলা শেষে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৫৫ দশমিক ০৭ পয়েন্ট, যা গত ১২ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৫৫ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

সাধারণ ও জীবন বিমা, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ ও রসায়ন, খাদ্য ও আনষঙ্গিক খাতের শেয়ারদর বেড়েছে একই সঙ্গে। এর প্রভাবেই সূচক দিয়েছে লাফ।

তবে এই উত্থানেও ব্যাংক-মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ঘুমিয়ে আছে বলা যায়। ব্যাংক খাত জাগলে বাজার আরও অনেক দূর যাবে সন্দেহ নেই।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমা গণনা পদ্ধতি শেয়ারের ক্রয়মূল্যে হিসাব করাসহ নানা কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন অনেকটাই নির্ভার। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অর্থনীতি নিয়ে যে আতঙ্কে পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছিল, তার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল নীতি পরিবর্তনের আভাস বিনিয়োগকারীদেরকে কিছুটা হলেও সাহস দিচ্ছে।

মাঝে একদিন বিরতি গিয়ে আগের দিনই লেনদেনের শীর্ষে ফেরা বস্ত্র খাত তার অবস্থান ধরে রেখেছে। সব মিলিয়ে ২২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে খাতটিতে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে, যাতে হাতবদল হয়েছে ২০৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা আর্থিক খাতে লেনদেন হয়েছে ১৮২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ১৬৮ কোটি ১০ লাখ টাকা, পঞ্চম স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিমা খাতে হাতবদল হয়েছে ১২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যার মধ্যে জীবন বিমাতেই লেনদেন হয়েছে ৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। চামড়া খাতে হাতবদল হয়েছে ১১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার।

ক্যাল সিকিউরিটিজের সিইও রাজেশ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল ছয় দিনের উত্থানের পরে কিছুটা প্রফিট টেকিং হয়েছিল এবং ডিএসইর এমডির পদত্যাগের বিষয়টি মানসিকভাবে বিনিয়োগকারীদের দুর্বল করেছিল। এ ছাড়া আর কিছু না। তবে এটা দেশের মানুষের জন্য কনসার্নের কিছু না হলেও বারবার ডিএসইর এমডির পদত্যাগের বিষয়টি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাঝে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়। যা পুঁজিবাজারের জন্য মোটেও ভালো নয়।’

সূচক বাড়াল যারা

সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৭২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার। শেয়ারটির দর ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ দর বেড়েছে।

আইপিডিসি ফাইন্যান্সের দর ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট।

ওরিয়ন ফার্মা সূচকে যোগ করেছে ৩ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।

এ ছাড়া ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইডএলসি, আইসিবি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা ও জিপিএইচ ইস্পাত সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট।

বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ১৩ পয়েন্ট সূচক কমেছে ওয়ালটন হাইটেকের দর পতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ।

আর কোনো কোম্পানি এককভাবে এক পয়েন্ট সূচক কমাতে পারেনি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের কারণে। বন্ডটির ইউনিট দর কমেছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ।

ম্যারিকো বাংলাদেশের দর শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৪৭ পয়েন্ট।

এ ছাড়া শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, এসিআই, মেঘনা পেট্রলিয়াম, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও যমুনা অয়েলের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৩ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ বা ২০ টাকা দর বেড়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের। গতকাল শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইজ ছিল ২০০ টাকা, সেটি আজ দাঁড়িয়েছে ২২০ টাকায়।

ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এটির দর বেড়েছে ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৪ টাকা ৫০ পয়সা বেড়ে শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সায়। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৪৫ টাকা।

৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ দর বাড়া ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স রয়েছে তালিকার তৃতীয় স্থানে। সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ১৫৫ টাকা ৩০ পয়সায়। আগের দিনে ক্লোজিং প্রাইজ ছিল ১৪১ টাকা ২০ পয়সা।

দর বৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জিকিউ বলপেন, ইস্টার্ন হাউজিং, হাক্কানি পাল্প, মেট্রো স্পিনিং, আরএসআরএম স্টিল ও ফনিক্স ফাইন্যান্স।

দর পতনের শীর্ষ ১০

দরপতনের শীর্ষে রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল। শেয়ারটির দর ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৭১ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়।

সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস দর পতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শেয়ারটির দর ৫০ পয়সা বা ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইজ দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ১০ পয়সায়।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে এমারেল্ড অয়েল। ১ টাকা ২০ পয়সা বা ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে শেয়ারটি সর্বশেষ ৩৬ টাকা ৭০ পয়সায় হাতবদল হয়।

দর কমার শীর্ষ দশে ছিল এস আলম স্টিল, সাফকো স্পিনিং, দুলামিয়া কটন, বিডি থাই ফুড, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ও আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এ বিভাগের আরো খবর