বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডলার বিক্রির চাপে আরও কমল রিজার্ভ

  •    
  • ২৪ আগস্ট, ২০২২ ২১:৩৪

আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। এই মেয়াদে বিল কত- সে হিসাব এখনও করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের মেয়াদের চেয়ে কম হবে, এটা নিশ্চিত। তবে ১ বিলিয়ন ডলারও যদি হয়, তাহলেও রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।

ডলার বিক্রির চাপে আরও কমেছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বাজারের চাহিদা মেটাতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবারও ৫ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত (১ মাস ২৪ দিন) ২০৪ কোটি (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির কারণেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ার পরও রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।

অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ১২ জুলাই আকু ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এরপর ২০ জুলাই পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৮০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। জুলাইয়ের শেষে তা কমে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

রেমিট্যান্স বাড়ায় জুলাইয়ের শেষের দিকে রিজার্ভ বেড়ে ৩৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ডলার বিক্রির কারণে তা ফের নিম্নমুখী হয়। বুধবার ৩৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের যে মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, তাতে বাজার থেকে ডলার কেনার অবদান ছিল।

আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে ত অর্থবছরে দেশে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিল। রপ্তানি আয় বাড়লেও ডলারের সংকট কাটছিল না। ফলে প্রতিনিয়ত বেড়েছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়িয়েছে। এর পরও কিছুতেই বাগে আসছে না ডলারের তেজিভাব।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে ওই অর্থবছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগস্ট থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, চলে পুরো অর্থবছর।

সেই ধারাবাহিকতায় চাহিদা মেটাতে নতুন অর্থবছরেও (২০২২-২৩) ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলার। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর।

এ হিসাবে এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।

তবে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ফের বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয়ও কমা শুরু করেছে। এর পরও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রিজার্ভ কমার কারণ জানতে চাইলে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রিজার্ভ কমার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এই ব্যয় বাড়ার অবশ্য কারণ ছিল, জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। জাহাজ ভাড়া বেড়েছে দুই গুণ-তিন গুণের মতো।’

‘তবে এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, গত বছরের আগস্টে আমাদের রিজার্ভ যে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল, তাতে কিন্তু দর ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো কিনেছিল তার একটা অবদান ছিল।’

‘আর এখন গত অর্থবছর এবং নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে সবমিলিয়ে ১০ বিলিয়ন ডলার মতো বিক্রি করেছে, সে কারণেই কিন্তু রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।’

‘আমি মনে করি, বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বর্তমানের রিজার্ভ সন্তোষজনক: কোনো ঝুঁকি নেই। তবে এর চেয়ে যেনো বেশি না কমে তার জন্য একদিকে যেমন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে জোর দিতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, শিগগিরই ডলারের সংকট কেটে যাবে। বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ইতোমধ্যে কার্ব মার্কেটে বেশ খানিকটা কমেছে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদা পূরণের জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার ছাড়া হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ এটি। যখন বাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দেবে তখন ডলার বিক্রি করা হবে। আবার যখন সরবরাহ বেশি হবে তখন কেনা হবে।’

২৩ দিনে রেমিট্যান্স ১.৬ বিলিয়ন ডলার

চলতি মাসের ২৩ দিনেই ১৬০ কোটি (১.৬০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ (২.১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বিদেশি মুদ্রা আগে কখনই পাঠাননি প্রবাসীরা।

সেপ্টেম্বরে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে

দুই মাস পরপর আকুর বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মে-জুন মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করা হয় ১২ জুলাই। সাধারণত দুই মাস শেষ হওয়ায় পরের মাসের প্রথম সপ্তাহে এই বিল শোধ করা হয়। ঈদের ছুটি থাকায় মে-জুন মেয়াদের বিল একটু পরে ১২ জুন শোধ করা হয়েছিল।

ওই সময় আকুর প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। এর পর থেকেই রিজার্ভ নিয়ে সারা দেশে আতঙ্ক ও নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। এই মেয়াদে বিল কত- সে হিসাব এখনও করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের মেয়াদের চেয়ে কম হবে, এটা নিশ্চিত। তবে ১ বিলিয়ন ডলারও যদি হয়, তাহলেও রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।

এ বিভাগের আরো খবর