বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এলডিসি উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে যুক্তরাজ্য

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২২ ২২:২৭

ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডিকসন বলেন, “ব্রিটিশ সরকার বিদ্যমান জিএসপি ব্যবস্থার স্থলে ‘ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম’ নামে একটি নতুন স্কিম ঘোষণা করেছে। নতুন এই স্কিম অনুযায়ী এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।”

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন।

সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন এই আশ্বাস দিয়েছেন।

বিজিএমইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই অনুষ্ঠানে শহিদউল্লাহ আজিম বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপট তুলে ধরে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেন। আর এ বিষয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনানের সহয়তা কামনা করেন।

সে সময় শহিদউল্লাহ আজিমকে আশ্বস্ত করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডিকসন বলেন, “ব্রিটিশ সরকার বিদ্যমান জিএসপি ব্যবস্থার স্থলে ‘ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম’ নামে একটি নতুন স্কিম ঘোষণা করেছে। নতুন এই স্কিম অনুযায়ী এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।”

ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাং বাংলাদেশের সহযোগিতায় সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ হাইকশিনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, এবং সাংবাদিকসহ অংশীজনদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৪৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত কয়েক দশক ধরেই দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখনকার শিল্প পরবর্তী ধাপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাই আমরা আমাদের ব্যবসায়িক সক্ষমতা বাড়াতে শিল্পের অগ্রাধিকারগুলো নির্ধারণ করেছি। বিশেষ করে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, উদ্ভাবন, প্রযুক্তির আপগ্রেডেশন এবং হাই-অ্যান্ড টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।’

বিজিএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বক্তব্য রাখছেন

শহিদউল্লাহ আজিম নতুন স্কিমের জন্য ব্রিটিশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে।’

বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্রিটিশ সরকারের বন্ধুত্বপূর্ন সহযোগিতা আগামি বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান মঞ্জুর এ চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান এবং ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাং বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস বক্তব্য রাখেন।

২০২৬ সালে এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এই উত্তরণের সুবাদে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মর্যাদা বাড়লেও বাংলাদেশকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কারণ, এলডিসি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া কিছু সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। ফলে রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে, ওষুধ উৎপাদনের খরচ বাড়বে। আরও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কারণ, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে যেসব শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো ২০২৬ সালের পর বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক বসবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক হিসাব অনুযায়ী, নতুন মর্যাদা পাওয়ার পর বাড়তি শুল্কের কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি ৫৩৭ কোটি ডলারের মতো কমতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণেই বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বিশেষ করে পোশাকশিল্প আজ এই সুদৃঢ় অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর পোশাক খাতই সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে এবং চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

তিনি বলেন, এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরিস্থিতিতে সার্বিক পরিবেশ উন্নত করতে হবে এবং অবকাঠামো ও মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখলে সেটা হবে আমাদের জন্য খুবই ভালো খবর,’ বলেন মঞ্জুর হোসেন।

বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে এখন আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে হয় না। কারণ, মেধাস্বত্বের (পেটেন্ট) ওপর অর্থ পরিশোধ করা হলে দাম বেড়ে গরিব মানুষের স্বল্প মূল্যে ওষুধ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। পেটেন্ট সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। তবে এলডিসি থেকে বের হলে এই সুবিধাটি আর থাকবে না।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে এখন বাংলাদেশ শিল্প ও কৃষি খাতের বিভিন্ন পণ্য বা সেবার ওপর ভর্তুকি দিতে পারে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে নগদ সহায়তা দেয়। এসব সুবিধা দেয়া নিয়ে আপত্তি উঠতে পারে। আবার অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ়—এমন মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া কঠিন হবে।

যদিও এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর আরও কয়েক বছর এলডিসি দেশের সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নকে টেকসই করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এই সুবিধা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর