ডলার সংকট মোকাবেলা ও মানি চেঞ্জারদের দৌরাত্ম্য কমাতে ব্যাংকের অন্য শাখায়ও ডলার বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে আবেদন চেয়ে ১১ আগস্ট সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ডলার বিক্রির অনুমোদন চেয়ে ৬৬৬টি শাখার জন্য ২৩টি ব্যাংক আবেদন করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম রোববার নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই চিঠিতে বলা হয়, নন-এডি (অনুমোদিত ডিলার) শাখাগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সুবিধার্থে নগদে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির সুযোগ দেয়া হবে। অনুমোদনের জন্য ব্যাংকগুলোকে ১৭ আগস্টের মধ্যে শাখার তালিকা জমা দিতে বলা হয়।
যেসব শাখাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয় সেগুলোকে অথরাইজড ডিলার বা এডি শাখা বলা হয়। এসব শাখার বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে পারে না ব্যাংক। কিন্তু মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরতা কমানো ও হুন্ডি প্রতিরোধে সারা দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় নগদ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩টি ব্যাংক তাদের ৬৬৬টি শাখায় নগদ ডলার লেনদেনের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। এখন তাদের আবেদনগুলো যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
আবেদন করা বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এডি শাখার বাইরে তারা ৫০টি শাখায় ডলার লেনদেনের জন্য আবেদন করেছেন। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ক’টি শাখাকে অনুমোদন দেবে সেগুলোতে ডলার বেচাকেনা শুরু হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা করা শাখার সংখ্যা খুব কম। যেগুলো আছে সেগুলোর বেশিরভাগই রয়েছে রাজধানী ঢাকা ও কয়েকটি বিভাগীয় শহরে। ফলে নগদ ডলার কেনাবেচার জন্য মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয়।
এ ধরনের সেবা কোন এলাকার কোন শাখায় চালু করা হবে, সেই সম্ভাব্য তালিকা চেয়ে দেশের সব ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত শাখাগুলোতে একটি ডেস্কের মাধ্যমে এই সেবা চালুর অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খোলাবাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে কিনতে হলে পাসপোর্ট এনডোর্স করতে হয়। এ কারণে অনেকে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে শেয়ারবাজারের মতো বিনিয়োগ করছেন। এতে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সবশেষ রোববার খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে ১১০ টাকা গুনতে হয়েছে৷ অথচ আন্তব্যাংকে ডলার রেট ৯৫ টাকা। সে হিসাবে আন্তব্যাংক রেটের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ১৫ টাকা। আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল এ পর্যন্ত এক শ’র বেশি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে ডলার কেনাবেচায় বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে শো-কজ করা হয়েছে। লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।
এছাড়া ডলারের দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ওই ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।