‘স্থানীয় পর্যায়ে খামারিদের গড়ে তোলা সমিতিগুলো ডিমের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কোনো ধরনের রসিদ না রেখে তারা মোবাইল ফোনে পারস্পরিক যোগসাজশে এমন অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান রোববার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। সে হিসাবে প্রতি ডিমে দাম বাড়তে পারে ৩ থেকে ৪ পয়সা। অথচ সমিতি দাম বাড়িয়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা৷ অথচ এতে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন না৷ অনেকে ভুয়া সমিতি খুলে বাজার অস্থিতিশীল করছে৷
‘অনেকে অর্গানিক ডিমের সিল দিয়ে তা বেশি দামে বিক্রি করছে যা অনৈতিক। এসব অপতৎপরতা রোধে বড় বড় কোম্পানিগুলোকেও অভিযানের আওতায় আনা হবে। আর জরিমানা নয়, এখন থেকে অসাধু ডিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর দফায় দফায় বাড়তে শুরু করে নিত্যপণ্যের মূল্য। এই সুযোগে ডিমের দামও বেড়ে যায়। সপ্তাহের ব্যবধানে এক ডজন লাল ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
এরপর সরকারের কয়েকটি সংস্থা বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করে। সপ্তাহের ব্যবধানে অস্থির ডিমের বাজার কিছুটা শান্ত হয়েছে।
ডিম ও ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে।
সভায় প্রান্তিক খামারি ও ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে, দেশে ডিম ও মুরগির বাজার মাফিয়া চক্রের দখলে। গত দুই সপ্তাহে চক্রটি পরিকল্পিতভাবে ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
১৯৮৮ সাল থেকে ডিমের ব্যবসা করে আসা তেজগাঁও এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘অনেক আগে গাজীপুর, মাওনা, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও নরসিংদী অঞ্চলে ডিমের ব্যবসা করেছি। ২০০১ সালে তেজগাঁও এলাকায় ব্যবসার শুরুতে আমরা সমবায় মন্ত্রণালয়ে একটি সমিতি রেজিস্ট্রেশন করি। ‘সমিতি রেজিস্ট্রেশনের ওই সময়টাতে আড়তদার ছিলেন ১২০ জন। তাদের মধ্যে কারও কারও ফার্মও ছিল। তখন খামারি ও আড়তদারদের সমন্বয়ে ডিমের একটা রেট দেয়া হত। সারা দেশ থেকে যারা কেনাবেচা করতেন তারা সেই রেট মেনে চলতেন।
সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের ওপর কোনো নীতিমালা নেই। নীতিমালার অভাবে পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা চলছে। সমন্বিত সিদ্ধান্তে দাম নির্ধারণের সেই অবস্থাও আর নেই। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো সংস্থা বা সংগঠন নেই। এজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণেরও কেউ নেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা।
তারা বলেন, ‘আমাদের খামারিদের ডিমের উৎপাদন খরচ কত, পরিবহন খরচ কত, তারা কত লাভ করবে এসব বিষয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
খুচরা ব্যবসায়ীরা কিছু দিন পরপর ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার জন্য আক্ষেপ করেন। বলেন, ‘আমরা তো এক জায়গার ক্রেতা এবং আরেক জায়গার বিক্রেতা। আমরা অসৎ ব্যবসায়ী কেন হব? তার মানে আমরা যেখান থেকে কিনছি সেখাতে প্রতারিত হচ্ছি।’
পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কেনার পর তাদের যেন রসিদ দেয়া হয় সে বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করেন তারা।