৫০ ছাড়িয়ে যাওয়া ডিমের হালি কেউ যদি ৪৫ টাকা রাখে, আবার বিনা মূল্যে ঘরে পৌঁছে দেয়?
কেবল ডিম নয়, ঘরে বসেই বাজারদরের চেয়ে কম দামে পণ্য পাওয়ার সুযোগ আছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে অনলাইন ঘাঁটলে এমন অনেক সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ১২ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত কম দাম নিচ্ছে তারা।
রাজধানীতে অনলাইন অর্ডারে পণ্য পৌঁছে দিতে ডেলিভারি চার্জও নিচ্ছে না বেশির ভাগ অনলাইন শপ। তবে কোনোটিতে জুড়ে দেয়া হচ্ছে শর্ত। কোথাও নির্দিষ্ট পরিমাণ কেনাকাটা করলে বিনা পয়সায় বাসায় পৌঁছে দেবে বলছে।
বাজারদরের তুলনায় এত কমে পণ্য বিক্রির কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কয়েকটি বিষয়। বেশি বিক্রি কম লাভ- এই নীতিতে কোনো কোনো শপ পাইকারি দামে বিক্রি করে। কোনো কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রাহক ধরছে।
৪৫ টাকা হালিতে ডিম কিনুন
নিত্যপণ্যের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি কথা যেটি নিয়ে, সেই ডিম বাজারদরের চেয়ে ২০ শতাংশ কমে কেনার সুযোগ দিচ্ছে অনলাইন গ্রোসারি শপ ‘অথবা ডট কম’।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে ফার্মের মুরগির এক হালি বাদামি ডিমের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে অনলাইন ঘাঁটলে এমন অনেক সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ১২ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত কম দাম নিচ্ছে তারা। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
৫৫ টাকা হালি ধরে হিসাব করলে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে ‘অথবা ডট কম’ বিক্রি করছে ১১ টাকা ২৬ পয়সা করে।
অর্থাৎ বাজারদরের চেয়ে প্রায় আড়াই টাকা বা ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ কমে দামে ডিম কেনা যাবে।
তবে এখানে এক হালি করে কেনার সুযোগ নেই। একসঙ্গে কিনতে হবে সাড়ে সাত হালি বা ৩০টি। আর এই ডিম ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে কোনো ডেলিভারি চার্জ ছাড়াই।
ডায়াপার্স বিডি ডট কমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সোপ বিডি ডট কম’ নামের অনলাইন শপে কেনা যাচ্ছে এক ডজন ডিমও। তারা ১২টি ডিমের দাম নিচ্ছে ১৪৫ টাকা। প্রতিটির দাম পড়ছে ১২ টাকা ৮ পয়সা, যা বাজারের চেয়ে ১ টাকা ৬৭ পয়সা বা ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ কম।
টিসিবির হিসাবে বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি পিস ডিমের দাম ছিল ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে ‘অথবা ডট কম’ বিক্রি করছে ১১ টাকা ২৬ পয়সা করে। ডায়াপার্স বিডি ডট কমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সোপ বিডি ডট কম’-এ পাওয়া গেছে ১২ টাকা ৮ পয়সায়। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
সোপ বিডি কম কমে ডিম ছাড়াও বাজারদরের চেয়ে কমে পাওয়া যাচ্ছে অন্য নিত্যপণ্যও।
বাজারে পেঁয়াজের দর ৪০ থেকে ৫৫ টাকা। তবে এই শপে পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ৩৮ করে। ৩০ টাকা কেজি মূল্যের আলু এখানে মিলছে ২৫ টাকায়।
এই শপ ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য দেবে, এ জন্য কোনো বাড়তি চার্জও নিচ্ছে না।
গ্রাহক পর্যায়ে পরিচিত বাড়াতে লোকসানে পণ্য বিক্রির কথা জানিয়েছেন ডায়াপার্স বিডির কাস্টমার-কেয়ার কর্মী মোস্তফা ইমন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের নতুন ওয়েবসাইট। গ্রাহক পর্যায়ে পরিচিত হওয়ার জন্য পণ্যের কেনা রেটের চেয়েও দুই-এক টাকা কম দামে আমরা বিক্রি করছি।’
৩৬ শতাংশ পর্যন্ত কম দাম
ওয়ালটনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ালকার্ট আদা, রসুনের দামে ৩১ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। থাই আদার প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা বা ৩৬ শতাংশ ছাড় দিয়ে ৭০ টাকায় বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। যেটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি। আর বাজারের চেয়ে ৩৮ টাকা কমে চায়না রসুন দিচ্ছে ১২০ টাকায়, যার বাজারমূল্য ১৫৮ টাকা।
ওয়ালকার্টের কল সেন্টার এক্সিকিউটিভ নাহিয়ান হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পাইকারি দামে অনেক পণ্য কিনি এবং সেটা কম দামে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছি। ফলে আমরা খুচরা বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য দিতে পারছি।’
৯৫০ টাকার যেকোনো পণ্যে ছাড় ১১০ টাকা
চেইন সুপার শপ মীনা বাজারে গিয়ে পণ্য কেনার চেয়ে ঘরে বসে কেনা অনেক বেশি লাভজনক।
এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মীনা ক্লিকে ৯৪৯ টাকার পণ্য অর্ডার করলে দিতে হবে ৮৩৯ টাকা। অর্থাৎ ১১০ টাকা ছাড় দিচ্ছে তারা। এই পণ্য বাসায় নিয়ে আসার পর কার্ড সোয়াপের মেশিনের মাধ্যমে বিল পরিশোধের সুযোগ থাকছে। ফলে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডেও সেই টাকা পরিশোধের সুযোগ আছে।
এই পণ্য হাতে পেতে আবার কোনো ডেলিভারি চার্জ দিতে হবে না।
কোনো কোনো ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে সুপারশপে কেনাকাটায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের ছাড় আসলে আরও বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ম্যানেজার (ব্র্যান্ড ও কমিউনিকেশন) মর্তুজা আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লাভ-লোকসান এভাবে হিসাব করা যায় না। আমাদের প্রমোশনের জন্য মার্কেটিং বাজেট থেকে অ্যালোকেট করা হয়। এটার কারণে আমরা কম দামে দিতে পারি।’
শুক্রবার সুপারশপে ছাড়ের ছড়াছড়ি
নাজিরশাইল প্রিমিয়াম যে চালের দর কেজিতে ৭৮ টাকায় বিক্রি হয়, গত দুই শুক্রবার মীনা বাজার সেটি বিক্রি করেছে ৬৮ টাকায়।
কেবল চাল নয়, প্রতিটি শপই শুক্রবার রীতিমতো বড় আকারের লিফলেট ছেপে বিভিন্ন পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে।
প্রাণের অনলাইন শপ ডেইলি শপিংয়ের পক্ষ থেকে ছাড় দেয়ার আগের দিন হোয়াটস অ্যাপে কোন পণ্য কত টাকায় বিক্রি করা হবে, সে তথ্য জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হয়।
স্বপ্ন সুপার শপ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। আর ছুটির দিন ছাড়াও এসব শপে দুটির সঙ্গে একটি বা তিনটির সঙ্গে একটি এমনকি একটির সঙ্গে একটি ছাড় থাকে।
আবার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো সেবা ব্যবহার করলেও দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ছাড় পাওয়ার সুযোগ আছে। স্বাভাবিক ছাড়ের সঙ্গে এই ছাড় আবার বাড়তি।