টানা কয়েক দফা বেড়ে চূড়ায় ওঠার পর স্বর্ণের দাম বেশ খানিকটা কমেছে। দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ২ হাজার ২৭৪ টাকা কমে ৮২ হাজার ৫৬ টাকায় নেমে এসেছে।
আমেরিকান মুদ্রা ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছিল স্বর্ণের দাম। ডলারের দাম কমতে শুরু করায় স্বর্ণের দামও কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দশ দিন আগে গত ৭ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই মূল্যবান এই ধাতুটি এত দামে বিক্রি হয়নি।
বুধবার রাতে সব ধরনের স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম কমায় সাধারণ স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত মে মাসে স্বর্ণের ভরি বাড়তে বাড়তে ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায় উঠেছিল। এরপর বিশ্ববাজারে দাম কমায় তা ৭৫ হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
এর পর আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণেল দাম বাড়ায় জুলাই ও আগস্ট মাসে টানা কয়েক দফা বেড়ে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায় উঠেছিল।
বৃহস্পতিবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৮২ হাজার ৫৬ টাকা। বুধবার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায়। দাম বেড়েছে ২ হাজার ২৭৪ টাকা।
অন্যান্য মানের স্বর্ণের দামও প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় টানা তিন দফা কমানোর পর গত ২৬ জুলাই প্রতি ভরি সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। দুই দিনের ব্যবধানে ২৮ জুলাই আরও ২ হাজার ৭৪১ টাকা বাড়ানো হয়। ৩ আগস্ট ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। সবশেষ ৭ আগস্ট বাড়ানো হয় ১ হাজার ৯৮৩ টাকা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানো হয়।
চার দিনের ব্যবধানে ২১ মে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় বাজুস। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে স্বর্ণের দাম উঠে যায় ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায়।
বিশ্ববাজারে দাম কমায় ২৬ মে সেই স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৬ জুলাই আরও ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বুধবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববাজারে বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৭৬১ ডলার ৬৬ সেন্ট। এর আগে ৬ আগস্ট রাতে যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়, তখন প্রতি আউন্সের দাম ছিল ১ হাজার ৭৭৪ ডলার ৯৬ সেন্ট।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে ২ হাজার ৬০ ডলারে উঠেছিল।
১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি।
বৃহস্পতিবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৮২ হাজার ৫৬ টাকায় বিক্রি হবে। বুধবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কমেছে ২ হাজার ২৭৪ টাকা।
২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ১৫৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৩২৪ টাকা হয়েছে। এই দশ দিন ৮০ হাজার ৪৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই মানের স্বর্ণ।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৮৬৬ টাকা কমে হয়েছে ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা। বুধবার পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৯৯৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৬৯১ টাকা কমে হয়েছে ৫৫ হাজার ২৮৭ টাকা। এই দশ দিন এই মানের স্বর্ণ ৫৬ হাজার ৯৭৯ টাকা ভরিতে বিক্রি হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সকল স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত বাজুসের বেঁধে দেয়া দামে স্বর্ণ বিক্রি করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।