প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে যাওয়া দাম নিয়ন্ত্রণে এবার ডিম আমদানির চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। পাশাপাশি দেশে কেন এভাবে হুট করে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, সেটিও মূল্যায়ন করা হবে।
এক মাস ধরে ডিমের দাম এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে যাওয়ার পর তীব্র জন-অসন্তোষ ও অস্বস্তির মধ্যে বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা জানান। এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম নিয়ে জানাতে তিনি আসেন গণমাধ্যমের সামনে।
ডিম নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী মনে করেন, সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা করছে। তিনি বলেন, ‘সুযোগ যখন নেয় সবাই একবারে লাভ দিয়ে করে নেয়।’
রাতারাতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষি, মৎস্যসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় মিলে ডিমের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করব দাম কীভাবে কমানো যায়।’
আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিম আমদানি করতে তো একটু সময় লাগবে। আমরা দেখি, যদি এমনটাই হয় যে সত্যি ডিম আমদানি করলে এটা কমবে, তাহলে আমরা ডিম আমদানির প্রক্রিয়ায় যাব।’
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে ফার্মের মুরগির ডিমের হালি এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৪৩ থেকে ৪৭ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা হালি। আর এক বছর আগে ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা।
অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের মতো, এক মাসে বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আর এক বছরে বেড়েছে ৫৪ শতাংশের বেশি।
ডিমের এই দাম বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আজই বৈঠকে বসার কথাও জানান টিপু মুনশি। বলেন, ‘সেখানে আলোচনা হবে কেন ডিমের দাম এমন হলো। তৃণমূলে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, আমরা সেগুলো দেখছি। বিভিন্ন সময় এমন অসুবিধা হয়েছে, সেগুলো আমরা অ্যাড্রেস করেছি। দু-চার বা পাঁচ দিন সময় অবশ্য লেগেছে।’
ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে কি?
বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি নিয়েও বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। আলোচনা চলছে। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে, আবার ডলারের দাম বেড়েছে। এ দুটিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি দাম নির্ধারণ করতে হবে।
‘আমরা সেই চেষ্টাই করছি। খুব শিগগিরই তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হবে। আমরা বসে আছি যদি ডলারের দামটা একটু কমে। আমাদেরও ওদের সঙ্গে নেগোশিয়েট করার একটু সুযোগ হবে।’
ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিতরণে অনিয়ম প্রসঙ্গ
ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিতরণে এক কোটি মানুষ বাছাইয়ে অনিয়ম হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘শহরগুলো থেকে ৭০ লাখ লোক ঠিক করা হয়েছে। রমজানের মাসে ঈদকে সামনে রেখে সময় কম থাকায় তখন একটু তাড়াহুড়া ছিল। স্থানীয় কমিটি এ তালিকা করেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করেনি।
‘টিআইবি যে রিপোর্ট করে, সেটা প্রথম দিককার রিপোর্ট, মার্চ ও এপ্রিলের দিকে তারা চেক করেছে। তারা এক কোটি কার্ডধারীর মধ্যে এক হাজার ৪৭ জনকে নিয়েছেন। যেটার পার্সেন্টেজ পয়েন্ট দশমিক ০০০১৪ শতাংশ। এর মধ্যে বাদ দেয়া সাড়ে ৮ লাখ মানুষও তো আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাপ্রিসিয়েট করি, যেকোনো রিপোর্ট যেকোনো তদন্ত- সেটা আমাদের চোখ-কান খুলে দেয়। কিন্তু সেটি যদি যৌক্তিক হয় বা সেটা যথার্থ হয়, তাহলে আমাদের পক্ষে কাজ করতে সুবিধা হয়। তা না হলে মানুষের মধ্যে কনফিউশন সৃষ্টি করে। তারপরও আমরা কাউকে আন্ডারমাইন্ড করতে চাই না। আমাদের দায়িত্ব যে, সত্যিটা কী, কী ঘটনা ঘটেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বলা হয়েছে নাম ঢোকার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। আমি একেবারে অস্বীকার করতে চাই না যে হয়নি। কিন্তু রিয়েলিটিটা কী, আমাদের দেশটা কোথায়? পশ্চিমা বিশ্বের মতো না যে, একটা চাপ দিয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাবে। আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে কমিটির ওপর। হতে পারে ৫ শতাংশ মানুষ নজর ফাঁকি দিয়ে ঢুকে গেছে। কিন্তু আমরা ৯৫ শতাংশ মানুষের কাছে তো পৌঁছে গেলাম। আমরা পর্যায়ক্রমে কিন্তু সেগুলোও দেখছি।
‘আমরা আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চাই। এ চলার পথে যদি কোথাও কোনো কারেকশন দরকার হয়, কোথাও কোনো অনিয়ম থাকে, সেটাও আমরা অ্যাড্রেস করব।
‘এক কোটি কার্ডের মধ্যে ৮০ শতাংশ কার্ড করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে এখনও কার্ড দেয়া হয়নি। আশা করি এক মাসের মধ্যে শতভাগ হয়ে যাবে।’