আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমলেও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালিত ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড দারুণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ফান্ডগুলো ৬ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ফান্ডগুলোর ইউনিট মূল্যের বিবেচনায় প্রতিটির লভ্যাংশের হার দেশে যেকোনো সঞ্চয়ী হিসাবের মুনাফার হারের চেয়ে বেশি। এমনকি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলেও এত বেশি হারে মুনাফা পাওয়া যায় না।
রোববার ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বোর্ড গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এই লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড। আর সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৬০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে এফবিএফআইএফ মিউচুয়াল ফান্ড।
কোম্পানিটি মোট ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে। এগুলোর মুনাফা পুঁজিবাজারের এক বছরের সার্বিক অবস্থার তুলনায় বেশ ভালো। ২০২১ সালের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সার্বিক সূচক ছিল ৬ হাজার ২১৯ পয়েন্ট, যা অর্থবছর শেষে গত ৩০ জুন ছিল ৬ হাজার ৩৭৬ পয়েন্ট।
এক বছরে বেড়েছে ২.৫২ শতাংশ। তবে তিনটি ফান্ডের ইউনিট মূল্যের বিবেচনায় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পাবেন এর চেয়ে বেশি।
কেবল এই পরিসংখ্যানে বোঝা যাবে না, গত এক বছরে পুঁজিবাজারে কতটা কঠিন সময় গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইসির সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৭ হাজার ৩০০ পয়েন্ট পেরিয়ে যখন ৮ হাজারের পথে ছোটার স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল, তখন শুরু হয় দীর্ঘ দর সংশোধন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বাজার আপন গতিতে ফেরার আশা তৈরি করেও শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা সিদ্ধান্ত, এরপর ইউক্রেনে রুশ হামলার পর অর্থনীতির চাপে পড়ার মধ্যে বাজারে নামে ধস।
এই পরিস্থিতিতেও রেইস পরিচালত দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবার লভ্যাংশ বাড়িয়েছে। দুটির লভ্যাংশ অনেকটাই কমে গেছে। বাকিগুলোর লভ্যাংশ আগের বছরের কাছাকাছিই বলা চলে।
রেইসের সব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের গড় ইউনিটদর ৬ টাকা ১ পয়সা। এর মধ্যে গড়ে লভ্যাংশ মিলবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এই ১০টি ফান্ড সম্মিলিতভাবে ২০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এই ফান্ডের মধ্যে ছয়টি ফান্ড আয়ের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। রিজার্ভ থেকে তারা এই লভ্যাংশ দেবে। বাকি ছয়টি ফান্ড তাদের আয়ের কিছু অংশ রিজার্ভে রাখবে।
যারা এই লভ্যাংশ নিতে চান, তাদেরকে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ইউনিট ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ সেদিনই হবে ফান্ডগুলোর রেকর্ড ডেট।
রেইস পরিচালিত ১০টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সবশেষ বাজার মূল্য, লভ্যাংশের হার, ডিভিডেন্ড ইল্ড ও টাকার অঙ্কে লভ্যাংশ।
ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিট দর ৭ টাকা ৪০ পয়সা। ১১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা হওয়ায় ইউনিট মূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ হবে ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আবার করমুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীর প্রকৃত মুনাফা আরও বেশি।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২২ পয়সা। গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৯২ পয়সা আয় করে ৬০ পয়সা বা ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
গতবার আয় বেশি করলেও লভ্যাংশ কম দেয়ার কারণ তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩৫ পয়সা লোকসান দিয়েছিল। গত বছরের আয় থেকে আগের বছরের লোকসান সমন্বয় হয়েছিল।
এক বছরে টালমাটাল পুঁজিবাজারেও ফান্ডটি ২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির ইউনিটদর ৫ টাকা ৪০ পয়সা। এটি বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ দেবে ৭ শতাংশ। অর্থাৎ এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ যত আয় করেছে, লভ্যাংশ তার প্রায় দ্বিগুণ।
গত বছর এই ফান্ডটি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৮৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৮ পয়সা। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৩ পয়সার লোকসান সমন্বয় করে লভ্যাংশ ঘোষণা হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
ফান্ডটির ইউনিটদর বর্তমানে ৫ টাকা ৪০ পয়সা। এটিও লভ্যাংশ দেবে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। এই ফান্ডের ডিভিডেন্ড ইল্ড ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৫৫ পয়সা। গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৪ পয়সা আয় করে সাড়ে ৮ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৮৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৩ পয়সা লোকসান সমন্বয় করেছিল ফান্ডটি।
এই ফান্ডটি এবার ১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিটমূল্য ৫ টাকা ৪০ পয়সা। ফান্ডটিও ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিটমূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড ইল্ড ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৩১ পয়সা মুনাফা করে এর দ্বিগুণের চেয়ে লভ্যাংশ দেবে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৮০ পয়সা অর্থাৎ ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সে বছর ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৬১ পয়সা। তার আগের বছর ইউনিটে ১ টাকা ৮০ পয়সা লোকসান সমন্বয়ের কারণে লভ্যাংশ কম হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এটিরও ইউনিটদর, লভ্যাংশ এবং ইল্ড ওপরের তিনটি ফান্ডের সমান।
৫ টাকা ৪০ পয়সায় যারা ইউনিটটি কিনেছেন, তারা ৭০ পয়সা হিসেবে ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ পাবেন লভ্যাংশ হিসেবে।
এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৩৫ পয়সা মুনাফা করে এর দ্বিগুণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৭৫ পয়সা অর্থাৎ সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৩২ পয়সা। এই আয় থেকে তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৫৮ পয়সার লোকসান সমন্বয় হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
ট্রাস্ট ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির ইউনিটমূল্য বর্তমানে ৬ শতাংশ। তারা লভ্যাংশ দেবে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। এই ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা তার বিনিয়োগের ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন।
ফান্ডটির এবার ইউনিটপ্রতি আয় হয়েছে ৭৯ পয়সা। অর্থাৎ এটি এবার আয়ের কিছুটা কম লভ্যাংশ দেবে। ইউনিটপ্রতি ৯ পয়সা রিজার্ভে যোগ হবে।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ২৪ পয়সা আয় করে ৯ শতাংশ, অর্থাৎ ৯০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাাক ৩৭ পয়সা লোকসান সমন্বয় করে সেই লভ্যাংশ ঘোষণা হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এফবিএফআইএফ
এই ফান্ডের মুনাফার হার এবার সবচেয়ে কম; ইউনিটপ্রতি ৬০ পয়সা বা ৬ শতাংশ। তবে ইউনিটমূল্য বিবেচনায় নিলে তা যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
বর্তমানে একেকটি ইউনিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৬৯ পয়সা। এর মধ্যে ৯ পয়সা রেখে দিয়ে বাকিটা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হবে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৯৩ পয়সা আয় করে ৪০ পয়সা অর্থাৎ ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৫৫ পয়সার লোকসান সমন্বয় হয়েছে গত বছর।
এই ফান্ডটি এবার ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিটমূল্য ৬ টাকা ২০ পয়সা। ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিটমূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড ইল্ড ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি মুনাফা করেছে ৭১ পয়সা। এর মধ্যে কেবল ১ পয়সা রাখা হবে রিজার্ভে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা আয় করে ৭৫ পয়সা অর্থাৎ সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৮ পয়সার লোকসান সমন্বয় হয়েছে গত বছর।
এই ফান্ডটি এবার ১০ কোটি ৩ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিটমূল্য ৬ টাকা ৩০ পয়সা। ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিটমূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড ইল্ড ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি ২৪ পয়সা আয় করে এর তিন গুণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৫৪ পয়সা আয় করে ১ টাকা ৩০ পয়সা অর্থাৎ ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সেই আয় থেকে তার আগের বছরের ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৬ পয়সা লোকসান সমন্বয় করা হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ২০ কোটি ২৯ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির মুনাফা অনেকটাই কমে গেছে। ৭ টাকা ৪০ পয়সা ইউনিট দর ফান্ডটির। এবার লভ্যাংশ দেবে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে ইউনিটপ্রতি ৬৫ পয়সা।
ইউনিটদরের তুলনায় লভ্যাংশ কম এলেও বিনিয়োগকারীর ডিভিডেন্ড ইল্ড এফডিআরের সুদহারের তুলনায় বেশ ভালো। বিনিয়োগের ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাওয়া যাবে লভ্যাংশ হিসেবে।
ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি সবচেয়ে কম ১৯ পয়সা মুনাফা করেছে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৬১ পয়সা মুনাফা করে ১ টাকা ৩০ পয়সা অর্থাৎ ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সেই মুনাফা থেকে তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩৫ পয়সা লোকসান সমন্বয় করেছিল ফান্ডটি।
এই ফান্ডটি এবার ৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।