পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের এক্সপোজার লিমিট নিয়ে এক যুগের দাবি পূরণের পরও সপ্তাহজুড়ে দরপতন নিয়ে পুঁজিবাজারে যে হতাশা ছড়িয়েছিল, নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন সেখান থেকে উত্তরণের আশা তৈরি হয়েছে।
রোববার সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেন। যতসংখ্যক শেয়ারের দর কমেছে, বেড়েছে তার দ্বিগুণসংখ্যক কোম্পানির। আবার ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর যে চিত্রটি গতবার দেখা গিয়েছিল, সেটি আবার ফিরে এলো। শতাধিক কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে, সেগুলোর সিংহভাগই ফ্লোর প্রাইসে। তবে এসব শেয়ারের ক্রেতা নেই বললেই চলে।
প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর ৩১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বাড়ে ৩৩১ পয়েন্ট। লেনদেন ৪৪১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ২০০ কোটি ছুঁই ছুঁই হয়ে যায়।
এই সপ্তাহে আবার ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট শেয়ারের ক্রয়মূল্যে গণনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আসে, যা বিনিয়োগকারীদের উৎফুল্ল করে।
গত সপ্তাহের ৭ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ দিনের মধ্যে এক দিন আশুরার ছুটিতে বন্ধ ছিল পুঁজিবাজার। বাকি চার কর্মদিবসের প্রতিদিনই সূচক ও লেনদেন কমেছে। পুঁজিবাজারে এক যুগের দাবি পূরণের পরও ডিএসইএক্স ১৬৩ পয়েন্ট কমে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে আসে।
এর মধ্যে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেবে। এই গুজবের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানতে পারে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ফেসবুক পেজ থেকে এই গুঞ্জনের তথ্য উড়িয়ে দেয়া হয়। জানানো হয় হয়, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার কোনো চিন্তা নেই।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করে। গত এক বছরে পুঁজিবাজার টালমাটাল থাকলেও ফান্ডগুলো মুনাফা করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বেশ কয়েকটির লভ্যাংশ ইউনিটের বাজার দরের তুলনায় আকর্ষণীয়।
এই অবস্থায় নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়েছে। কিছুক্ষণ বেড়ে গিয়ে সেখান থেকে কিছুটা পড়ে আবার বেড়ে গিয়ে চলতে তাকে লেনদেন। তবে কোনো একটি সময়ের জন্য সূচক আগের দিনের চেয়ে কমেনি।
শেষ পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় সূচক বাড়ে ২৬ পয়েন্ট।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
কিছুটা বেড়েছে লেনদেনও। হাতবদল হয়েছে ৬৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয় ৫৮৩ কোটি ৭৬ লাখ ৯৮ হাজার।
লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৮টির দর। ৮২টির দর কমেছে। ১৩০টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দামে।
লেনদেনের বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন পতনের কারণে শেয়ারের দাম একটা স্তরে নেমেছে। সে কারণে আবার শেয়ার কেনা শুরু হয়েছে, যা সূচক ও লেনদেন বাড়িয়েছে।’
গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় লেনদেনে এগিয়ে বস্ত্র খাত। এই একটি খাতেই হাতবদল হয়েছে ১১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার, যা গোটা লেনদেনের ১৮ শতাংশের বেশি। আর কোনো খাতে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়নি।
দর বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্রকেই এগিয়ে রাখতে হয়। এই খাতে চারটি কোম্পানির দরপতন এবং ১৭টির দর অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে বেড়েছে ৩৮টির দর।
প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, খাদ্য, বিবিধ খাতেও ভালো দিন গেছে। ব্যাংক খাত সকালে বাড়ার চেষ্টা করলেও পরে তা ধরে রাখতে পারেনি। আর ছোট খাতগুলোর মধ্যে দারুণ দিন গেছে কাগজে। এ খাতের ছয়টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে পাঁচটির দর, একটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে লোকসানি সোনারগাঁও টেক্সটাইলের। গত ৮ মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।
গত ২৯ ডিসেম্বর শেয়ারটি লেনদেন হয়েছিল ১৯ টাকা ২০ পয়সায়। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে রোববার ৭১ টাকা ৫০ পয়সায় ঠেকেছে এর দাম।
মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তিন কর্মদিবস পরে দর ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩০ টাকা ৭০ পয়সায়।
ঋণ কেলেঙ্কারি ও লোকসানে ডুবে থাকা ইউনিয়ন ক্যাপিটালের দর বেড়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
৮০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে- কে অ্যান্ড কিউ লিমিটেড, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, পেপার প্রসেসিং, সোনালী পেপার, বিডি থাইফুড, ফার কেমিক্যাল ও কোহিনুর কেমিক্যাল।
দর পতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল লিমিটেড। শেয়ারটির দর ৬ টাকা ৯০ পয়সা বা ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২০১ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়।
৬১৯ বারে কোম্পানির মোট ২৯ হাজার ৫৮১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৫৯ লাখ টাকা।
এস আলম কোল্ডরোল স্টিল দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শেয়ারটির দর ১ টাকা ১০ পয়সা বা ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৩৪ টাকা ৬০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ কমেছে শেয়ারটি সর্বশেষ ৪৭ টাকা ২০ পয়সায় হাতবদল হয়।
দর কমার শীর্ষ দশে ছিল লাফার্জ হোলসিম, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, ডমিনেজ স্টিল ও আর.এন স্পিনিং মিলস লিমিটেড।
সূচক বাড়াল যারা
সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে সোনালী পেপার। শেয়ারটির দর ৩ দশমিক ৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দর শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৫১ পয়েন্ট।
স্কয়ার ফার্মা সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ।
এ ছাড়া ওয়ালটন হাইটেক, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ওরিয়ন ফার্মা, কহিনূর কেমিক্যালস, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, সি পার্ল বিচ ও মালেক স্পিনিং সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট সূচক কমেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের দর পতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ৩ শতাংশ।
আর কোনো কোম্পানি সূচকে ১ পয়েন্ট কমাতে পারেনি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমেছে আইসিবির কারণে। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ।
বিএসআরএমের দর শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৩৭ পয়েন্ট।
এছাড়া সামিট পাওয়ার, রেকিট বেনকিজার, পদ্মা অয়েল, সিটি ব্যাংক, এস আলম স্টিল, ওয়াটা কেমিক্যাল, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৬ দশমিক ০২ পয়েন্ট।