বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেরুর পালে হাওয়া যে কারণে

  •    
  • ১২ আগস্ট, ২০২২ ২০:৩৬

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু মদ বিক্রি হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকার। লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি, যা কোম্পানিটির আয়ে এযাবৎকালের রেকর্ড।

করোনা মহামারি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কড়াকড়িতে বিদেশ থেকে মদ আমদানি অনেকটাই কমে গেছে। বিকল্প হিসেবে বেড়েছে স্থানীয় মদের চাহিদা। সে সুবাদে উৎপাদন ও বিক্রিতে রেকর্ড করেছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড ৮৩ বছরেরও বেশি পুরোনো প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ইউনিট থেকে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রি ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এ বছর শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ বিক্রি থেকেই কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি, যা কোম্পানিটির আয়ে এযাবৎকালের রেকর্ড। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু।

কোম্পানিটির দেয়া তথ্যমতে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ বিক্রি হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকার। এটা কেরুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই প্রথম ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে ১০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে কেরু। গত বছর এই ইউনিট থেকে লাভ ছিল প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও চিনি ইউনিটে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে কেরুতে। এর পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি ইউনিটে লোকসান সমন্বয়ের পরও কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে কেরুর মদ বিক্রি অন্য বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত মদের চাহিদা বেড়েছে ৩০ শতাংশ। সে হিসাবে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু।

প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি হয়ে থাকে। উৎপাদনও সে অনুযায়ী করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৭৫ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে মদ বাজারজাত করে থাকে।

একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি ও ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে। কেরুতে রয়েছে মদের ৯টি ব্র্যান্ড। এগুলো হচ্ছে- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।

কেরু সূত্র জানায়, দেশে বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় কেরুর মদের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছর শুল্ক ফাঁকি রোধে মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বিদেশি মদের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় দেশে উৎপাদিত মদের চাহিদা।

চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বাড়ায় কেরু। বিক্রিও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে কেরুর মুনাফা।

কেরুতে বর্তমানে ৯টি ভিন্ন ব্র্যান্ডের আওতায় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য ১০ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার মদ, ২৬ লাখ লিটার দেশি স্পিরিট ও ৮ লাখ লিটার ডিনেচার্ড স্পিরিট উৎপাদন করা হয়। মদের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি এবং গুড় উৎপাদন করে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি।

কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ফিদাহ হাসান বাদশা বলেন, ‘বর্তমানে কেরুতে চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) ও জৈব সার- এই ছয়টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিট লাভজনক।

‘আখের রসের গুড় থেকে অ্যালকোহল ও বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে থাকে কোম্পানিটি, যা চিনি উৎপাদনের উপজাত। চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর তিনটি উপজাত পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে গুড়, ব্যাগাস ও প্রেস মাড। মদ বা অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো গুড়। গুড়ের সঙ্গে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় অ্যালকোহল।’

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি শেষ হলে উৎপাদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করা হবে। উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়ে দ্বিগুণ হবে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে কেরুর। এ ছাড়া পাবনার রূপপুর, কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ১টি করে বিক্রয় কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও রামুতে ১টি করে ওয়্যারহাউস নির্মাণের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে সারা দেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস ও ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে দুটি নতুন বিক্রয়কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। বিক্রয়কেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরেরও কথা রয়েছে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিদেশি মদের সরবরাহ কমে আসার কারণে দেশীয় ব্র্যান্ড কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মদের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সারা দেশে ১৩টি ওয়্যারহাউস ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে আমরা বাড়তি চাহিদা পেয়েছি। এর মধ্যে ঢাকা ও শ্রীমঙ্গল ওয়্যারহাউসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

‘গত বছরের তুলনায় এবার কেরুর মদ বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। বাড়তি চাহিদা পূরণে কোম্পানির বিদ্যমান ক্যাপাসিটির ব্যবহার বেড়েছে। এখনও একটি বড় অংশ অব্যবহৃত রয়েছে। এরপরও চাহিদা বাড়লে তা পূরণে মদ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’

এদিকে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর দর্শনা চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধনকালে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে দ্বিতীয় একটি ইউনিট নির্মাণের কথা জানান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। কারণ এখানে উৎপাদিত মদের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জৈব দ্রাবকের মতো অন্যান্য পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে।

দেশে অ্যালকোহলের চাহিদা মেটাতে বিয়ার তৈরির লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইউনিটটি স্থাপন করা হবে বলে কেরুর একটি সূত্রে জানা গেছে। বিদেশি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর