সুদিনের অপেক্ষায় জ্বালানির সাময়িক মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে দেশের ভোক্তা, ব্যবহারকারী তথা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রোববার বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি বাণিজ্য ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান রাখেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে টিপু মুনশি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে জ্বালানির দাম বাড়ায় মানুষের কষ্ট হবে। খরচ বাড়বে। অনেকের অনেক সমস্যা হবে। কিন্তু এ কষ্ট সাময়িক। বৈশ্বিক বাস্তবতার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে আমাদের সুদিন খুব কাছে। কখনও কখনও সেই সুদিনের অপেক্ষায় একটু কষ্ট স্বীকার করতে হয়।’
সুদিনের অপেক্ষায় তিনি জনগণকে এই সাময়িক কষ্ট মানিয়ে নেয়ারও পরামর্শ দেন।
শুক্রবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১৩৫ টাকা।
এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার এখন ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে তিনিও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অপেক্ষা করুন, বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনাদের এই কষ্ট দ্রুত লাঘব করে দেশকে আবার সেদিনের ধারায় প্রত্যাবর্তন ঘটাবেন। আপনাদের মুখে হাসি ফোটাবেন।’
নির্বাচনকালীন নানা ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিরোধীরা নানা ইস্যু খুঁজছে। পদ্মা সেতুর খরচ বেশি হওয়া নিয়ে সরব আওয়াজ তোলা হচ্ছে। জ্বালানির দাম বেশি নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। ক্ষমতার পালা বদল নিয়েও নানা চেষ্টা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় সুযোগ-সন্ধানী চক্রের এই তৎপরতা চলতেই থাকে। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
‘আপনাদের গত ১৫ বছরের কথা ভাবতে হবে। এই সময় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি বিবেচনায় আনতে হবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ প্রেক্ষাপটে এখন উন্নত দেশগুলো খারাপ সময় পার করছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে।’
এটিকে তিনি নিন্দুকের ভাষায় খারাপভাবে না নেয়ার আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীদের প্রতি বাস্তবতা অনুধাবনেরও আহ্বান জানান মন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা বলুন শেখ হাসিনার গত ১৪ বছরের শাসন আমলে আপনাদের ইন্ডাস্ট্রি ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে কিনা? ব্যক্তিগত উন্নয়ন ঘটেছে কিনা? শুধু ব্যবসায়ী নয়, এই সময়ে সাধারণ মানুষেরও ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। এই সময়ে দেশ উন্নয়নের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
‘করোনাকালীন বিশ্ব সংকটেও বাংলাদেশ তার অর্থনীতি ধরে রেখেছে, উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খেয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষ হাতে করোনা মোকাবিলার মাধ্যমে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আমদানি বৃদ্ধির ফলে আমাদের রিজার্ভ কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। মূল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে এ পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে। তার ফলাফল আসতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা মান টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবান স্থিতিশীল হবে।’
বৈশ্বিক কারণে দেশের এই খারাপ সময় নিয়ে কিছু বিরোধী গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘তারা মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। বিক্ষুব্ধ করার চেষ্টা করছে।’
এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বিরোধী চক্রটি যেমন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তেমনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বুকে হাত দিয়ে যদি বুঝতে পারেন আপনার ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে এবং ব্যবসার সম্প্রসারণ হয়েছে তাহলে দেশের স্বার্থে উন্নয়নের স্বার্থে সমস্ত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এক কাতারে থাকতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে কাজ করতে হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান।
মূল প্রবন্ধে আতিউর রহমান বলেন, ‘বাংলার মানুষের পেট ভরা ভাত আর বেকারের কাজ নিশ্চিত করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। তার এই অন্তর্নিহিত ভাবনার উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের আজকের যত অর্থনৈতিক অগ্রগতি। যার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তার যোগ্য উত্তরসূরী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা।’
সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান ও সাবেক বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু প্রমুখ।