সরকারের বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেসরকারি খাত সংযুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই কার্যালয়ে শনিবার আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০: নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও সমৃদ্ধ বদ্বীপ অর্জনে বেসরকারি খাতের সংযুক্ততা’ বিষয়ক সেমিনারে তিনি এই আহ্বান জানান।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নে প্রতি বছর গড়ে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। এর ২০ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে যোগানের পরিকল্পনা রয়েছে। নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাসহ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ যত বাড়বে, কাজের গতি ও মান তত উন্নত হবে।’
বদ্বীপ পরিকল্পনা লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যবহৃত ড্রেজারসহ অন্যান্য ভারি যন্ত্রপাতি অনেকটাই আমদানিনির্ভর। তাই এসব পণ্যের শুল্ক হার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম উপাদান ড্রেজারের ওপর বর্তমানে মোট শুল্ক ৩১ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ড্রেজারের শুল্ক হার আগের ১ শতাংশে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যতম অনুষঙ্গ ড্রেজিংয়ের জন্য অপরিহার্য যন্ত্র ড্রেজারের শুল্ক হার পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে মাত্র ৩০টি ড্রেজার রয়েছে। কিন্তু এ কাজে দুই শতাধিক ড্রেজার দরকার।’
ড্রেজিং কার্যক্রমের পুরোটাই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
শামসুল আলম বলেন, ‘২০৩০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা পরিকল্পনার স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ঠিক করা হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধে সমৃদ্ধ বদ্বীপ অর্জনে ড্রেজিং, ভূমি পুনরুদ্ধার, জাহাজ নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, কৃষি ও সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ব্যাপক ভিত্তিতে সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করা গেলে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানও সহজ বলে মনে করেন তিনি।
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে আরও বেশি সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দেন সেমিনারের বিশেষ অতিথি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।
প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি কমছে। বিপরীতে বাড়ছে মানুষের খাদ্য চাহিদা। তাই বেসরকারি খাত ছাড়া আগামীর স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি খাত বিনির্মাণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ জানান, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন ডলারের বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। এজন্য ব্যক্তি খাতকে ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত করার বিকল্প নেই।
এর আগে প্যানেল আলোচনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘বেসরকারি খাতকে কাজে লাগিয়ে নদী ও সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ ভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ডেল্টা প্ল্যান পরিমার্জন করার পক্ষে মত দেন তিনি। একইসঙ্গে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বদ্বীপ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশীদার কারা হবেন তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য সচিব স্থপতি ইকবাল হাবীব।
এফবিসিসিআইর প্যানেল উপদেষ্টা ও চ্যানেল আই’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, ‘দেশের পরিবেশ-প্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের গতির তুলনায় গবেষণা কার্যক্রমের গতি ধীর। তাই অনেক সময় পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক অরনি বারকাত জানান, দায়ী না হয়েও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। এজন্য দায়ী দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলে এফবিসিসিআই সভাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান পরিচালক মো. নাসের।
বুড়িগঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী জমি সরকার দখলমুক্ত করার কিছুদিন পর আবার দখল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানান তিনি।