সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা ছিল সহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়াবে সরকার। এক লাফে এত বাড়ানো ঠিক হয়নি। এতে আমরা আঘাত পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত হানবে। আমি মনে করি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তে মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। এর ফলে হয়তো বিপিসি কিছুটা লাভবান হবে। কিন্তু দেশের জনগণের কষ্ট আরও বাড়বে।’
ভর্তুকির চাপ সামলাতে এ মুহূর্তে সরকারের বিকল্প কোনো পথ খোলা আছে কিনা জানতে চাইলে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে প্রধানত দুটো কারণে। প্রথমত, বলা হচ্ছে বিশ্ববাজারে জ্বালনি তেলের দাম বেড়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বিশ্ববাজারে এখন দাম কমে আসছে।
‘দ্বিতীয়ত, ভারতে তেল পাচারের কথা বলা হচ্ছে। আগে দেশে ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা। ভারতে ৯০ টাকা। তখন তো পাচারের কথা কেউ বলেনি। তা ছাড়া কী পরিমাণ তেল পাচার হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো সমীক্ষা নেই। মুখে মুখে বলা হচ্ছে। ফলে সরকারে সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।’
বিশ্ববাজারে যখন উচ্চমূল্য থাকে, তখন দেশের বাজারে বাড়ানো হয়। কিন্তু দাম কমলে আর কমানো হয় না। জনগণ এটাকে ভালো চোখে দেখে না বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে জ্বালানির মূল্য সমন্বয়ের একটা ফর্মুলা দিক সরকার। আইএমএফও একই কথা বলে আসছে। আমরা এ প্রস্তাব বহু আগে থেকে দিয়ে আসছি সরকারকে। কিন্তু তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।
‘এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে দেশের জনগণ বুঝত দাম বৃদ্ধি করা উচিত হবে কি হবে না বা কত দাম নির্ধারণ করা উচিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে দাম সমন্বয় করা হলে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হতো।’
এবার জ্বালানির দাম গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিশেজ্ঞরা বলেছেন, দাম বৃদ্ধি সহনীয় হলে ভালো হতো। এ ব্যাপারে তার মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে ম. তামিম বলেন, ‘দাম কত বাড়ালে সহনীয় হতো, এটা বলা মুশকিল। অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে বিষয়টি।
‘সরকার হয়তো মনে করছে, তেলের দাম কম বাড়ালে দেশের ভেতর সবকিছুর দাম বাড়বে, আবার বেশি বাড়ালেও দাম বাড়বে। সে জন্য এক ধাক্কায় বেশি বাড়ানো হয়েছে।’