বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তেলের দাম বাড়বে, আগেই জানতেন বাসমালিকরা

  •    
  • ৬ আগস্ট, ২০২২ ১৫:৫৬

যাত্রীদের ভোগান্তি আড়ালে আগের ভাড়া নিতে বাসের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মালিকরা। একই সঙ্গে বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে চালকদের অন্তত শনিবার দিনভর গাড়ি চালাতে বলেছেন তারা। শনিবার সকাল থেকে রাজধানী ও দূরপাল্লার বাস চলাচলের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে নিউজবাংলা।

সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা হঠাৎ দিলেও বিষয়টি আগেই জানতেন বাসমালিকরা। এ কারণে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন তারা।

যাত্রীদের ভোগান্তি আড়ালে আগের ভাড়া নিতে বাসের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মালিকরা। একই সঙ্গে বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে চালকদের অন্তত শনিবার দিনভর গাড়ি চালাতে বলেছেন তারা।

শনিবার সকাল থেকে রাজধানী ও দূরপাল্লার বাস চলাচলের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে নিউজবাংলা।

এদিকে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করতে দেখা যায় বাসের চালক ও সহকারীদের। ভাড়া বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা শনিবার বিকেলের মধ্যে না এলে পরিবহন ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চালকরা।

কৌশলী বাসমালিকরা

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শুক্রবার সন্ধ্যার প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়। অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা ‍গুনতে হবে।

এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।

ডিজেলের আকস্মিক এ মূল্যবৃদ্ধির পর শনিবার সকাল থেকে রাজধানী ও দূরপাল্লার অনেক বাসের চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এমনকি তারা আগের ভাড়াতেই গাড়ি চালানোর দাবি করেন, তবে এর বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে।

শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই অনেক মালিক তাদের বাস চালানো বন্ধ রাখেন।

রাজধানীর গুলিস্তান-মহাখালীসহ একাধিক বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। রাজধানীর গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সব রুটের বাস ছাড়ছে এখান থেকে।

গাজীপুরগামী একটি পরিবহনের চালক মিল্টন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মালিক বলেছে আজকে কষ্ট করে হলেও আগের ভাড়াতেই বাস চালাতে। বিকেলের মধ্যেই ভাড়া বাড়ানোর একটি সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। এটা নিয়ে আমাদের দুঃশ্চিন্তা করতে মানা করেছে মালিক।’

ঢাকার দোহারগামী একটি বাসের চালক মোহাম্মদ আলী জানান, মালিকের নির্দেশে তিনিও আগের ভাড়াই নিচ্ছেন।

তেলে বাড়তি খরচ করে বাস চালানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই তো দুপুর পর্যন্তই চালাব। তারপর অবস্থা বুঝে বন্ধ করে দেব। ভাড়া না বাড়লে গাড়ি বন্ধ থাকবে।’

আগের ভাড়াতে বাস চলছে কি না, তা যাচাই করতে কয়েকটি বাসে চড়ে রাজধানীর একাধিক গন্তব্যে যান এ প্রতিবেদক। প্রতিটি বাসের সহকারীরা যাত্রীদের কাছ থেকে আগের ভাড়াই আদায় করেন।

আগের ভাড়ায় বাস চালাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে গুলিস্তান থেকে গাজীপুরগামী একটি পরিবহনের সহকারী বলেন, ‘আমরা তো বাস নামাইতাম না। আমাগো মালিক আওয়ামী লীগের নেতা। সরকারের কথা তো মানতে হইব। আমাগোরে কইল তোরা বাস চালা।

‘ভাড়া বাড়ানোর ব্যবস্থা হইতাছে। বাড়তি ভাড়া নিয়া গ্যাঞ্জাম বাধাইস না। পাবলিক ক্ষেইপা গেলে চাপ আইব। চুপচাপ থাক; সব হইব।’

যাত্রাকালে কথাচ্ছলে মহাখালী থেকে মিরপুরগামী একটি বাসচালকের কাছ থেকেও একই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

মিরাজ নামের ওই চালক বলেন, ‘মালিক বলল, কোনো ঝামেলার দরকার নাই। ভাড়া অটো বাড়ব। কোনো আওয়াজ দরকার নাই।’

চালকের তথ্য অনুযায়ী, এ পরিবহনের মালিকও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত।

মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল স্বনামধন্য পরিবহনগুলোর টিকেট কাউন্টারগুলো খোলা, তবে বন্ধ রয়েছে অনেকগুলো পরিবহনের কাউন্টার।

খোলা কাউন্টারগুলোতে আগের ভাড়াতেই যাত্রীদের টিকেট দেয়া হচ্ছে।

উত্তরা পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বরত মো. আলিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই আমাদের বাস চলছে, তবে আগের তুলনায় অর্ধেক। সব মালিকরা বাস চালাচ্ছেন না। আজকে সকাল থেকে ৬টা বাস ছেড়ে গেছে।

‘অন্য দিন এই সময়ে ১২ থেকে ১৫টি বাস ছাড়ে। একটু পর হয়তো আর আমাদের বাস চলবে না।’

কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বরত মো. শামীম বলেন, ‘আমাদের বাস চলেছে। মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সমিতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। বিকেলের মধ্যে সিদ্ধান্ত না পেলে বাস বন্ধ করার প্রস্তুতি আছে আমাদের।’

কাউন্টারগুলো থেকে আগের ভাড়ায় যাত্রী তোলা হলেও কিছু কিছু বাসের চালক-সহকারীদের মাঝ রাস্তা থেকে বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী তুলতেও দেখা যায়।

মহাখালী টার্মিনালের বাইরে ময়মনসিংহগামী স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের সহকারীর সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান সুমন নামের এক যুবক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মুক্তাগাছা যাব। অন্য সময় ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় যাই। আজকে ওরা ৩৫০ টাকা চাইছে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে। সরকার তো এখনও বাসের ভাড়া বাড়ায়নি। তাহলে তারা কেন বাড়তি ভাড়া আদায় করছে?’

মালিক সমিতির মহাসচিবের ভাষ্য

বাস চলাচল, ভাড়া বৃদ্ধিসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব মালিককে বাস চালাতে আমরা নির্দেশ দিয়েছি। একই সঙ্গে বাড়তি ভাড়া না নিতেও বলা হয়েছে। অধিকাংশ বাসমালিকই আমাদের নির্দেশনা মানছেন।

‘কেউ কেউ আছে, তারা তাদের বাস বন্ধ রেখেছেন। আমরা ভাড়া সমন্বয়ের জন্য বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছি। আজকে বিকেল ৫টায় বিআরটিএ কার্যালয়ে একটি বৈঠক হবে। আমরা যাত্রী সাধারণের কথা মাথায় রেখে বাস চালিয়ে যাব।’

নির্দেশনা অমান্য করে বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তেলের দাম বাড়লে পরিবহন খাতে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আর অস্থির সময়ে সবাইকে নিয়মের মধ্যে রাখা সম্ভব হয় না।

‘এমন সময়ে অনেকেই সুযোগ নিতে চায়। তবুও আমরা খেয়াল রাখব ভাড়া সমন্বয়ের আগে কেউ যেন বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে।’

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবর আগে থেকে জানতেন কি না, সে প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা জানতাম। মাসখানেক আগে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে একটা মিটিং করেছিলাম আমরা। তখন এ বিষয়টা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল।’

এ বিভাগের আরো খবর