‘গতকাল (শুক্রবার) রাতে আটটি পাম্প ঘুরেও তেল নিতে পারিনি। অবশেষে আজকে (শনিবার) সকালে বাড়তি দামে তেল নিতে পেরেছি।’
রাজধানীর রমনা পেট্রল পাম্পে তেল নিতে এসে কথাগুলো বলছিলেন সগির হোসেন লিয়ন নামের এক ব্যক্তি।
দেশের ইতিহাসে একসঙ্গে এত টাকা কখনও বাড়েনি বলে দাবি করেন ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য তেল নিতে আসা লিয়ন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম এত বেশি বাড়ানো হয়েছে যে, এতে মানুষের জন্য অত্যন্ত খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে। তেলের দাম এবার যত বাড়ানো হয়েছে, আমার মনে হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে এত টাকা একবারে বাড়েনি।
‘গতকাল তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সবাই পাম্পগুলো বন্ধ রাখে। গতকাল আটটি পাম্প ঘুরেও তেল পাইনি। অবশেষে আজকে বেশি দামে তেল নিলাম। এ ধরনের অরাজকতা জনজীবনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলবে।’
একই পাম্পে তেল নিতে আসা পাঠাও চালক মেহেদী হাসান বলেন, ‘এভাবে হঠাৎ করে তেলের দাম এত টাকা বাড়ানো ঠিক হয়নি। বাড়াবে ঠিক আছে। সেটা ধীরে ধীরে বাড়াতে পারত।
‘লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারত, কিন্তু একসঙ্গে এত টাকা বাড়াল। এটা কি মেনে নেয়ার মতো?’
অকটেনে লিটারপ্রতি ৪৬ টাকা বাড়ানোর বিষয়টিকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে মেহেদী বলেন, ‘সবকিছুরই পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। তেলের দাম বাড়ানোর ফলে ভাড়াও বাড়বে।’
আরেক বাইক চালক সোহেল বলেন, ‘দাম যতই বাড়াক, আমাদের কোনো উপায় নেই। যাতায়াত করতে হবে। আর এ জন্য বাড়তি টাকায় হলেও তেল কিনতে হবে। সরকার তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০০ করুক বা ২ হাজার টাকা করুক, আমাদেরকে তো সেই দামেই কিনতে হবে। এ ছাড়াও তো উপায় নেই।
‘তেলের নাম বাড়ল মানে সবকিছুর দামই আরও বাড়বে। তেলের সঙ্গে সবকিছুর সম্পর্ক। মানুষের আয় তেমন বাড়েনি, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। যাদের আয় কম, তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হবে।’
তেলের দাম বাড়ার কথা জানতেন না পাঠাও চালক ইমরান। পাম্পে এসে তিনি জানতে পারেন বিষয়টি।
ইমরান বলেন, ‘আজকে পাম্পে তেল নিতে এসে দেখি দাম বেড়েছে। এখন কী করার। বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাইকের ট্যাংকি ফুল করতে যেখানে আগে ৮০০ টাকা লাগত, এখন সেখানে ১ হাজার ২৩০ টাকা লাগল।’
রমনা পেট্রল পাম্পের ম্যানেজার ওসমান গণি বলেন, ‘টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে মেশিনের গিজার ঠিক করতে দেরি হওয়ায় আজকে ১০টা থেকে আমরা ওপেন করেছি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল রাত ১২টা থেকে বাড়তি মূল্য কার্যকর হয়েছে। আমরা আজকে শুরু করেছি। হঠাৎ করে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ একটু আতঙ্কিত হয়েছে, তবে অন্য দিনের তুলনায় আজকে তেল আরও বেশি করে মানুষ কিনছে।’
পাম্পটির কর্মচারী আশরাফুল বলেন, ‘দাম বাড়লেও আজকে সবাই আরও বেশি বেশি করে তেল নিচ্ছেন। অনেকেই বাইকের ট্যাংকি ভরে নিচ্ছেন। সামনে যদি আরও বাড়ে বা তেল যদি না পাওয়া যায়! মানুষ এক ধরনের আতঙ্কে আছে। সবাই দেখি বেশি করে তেল কিনছেন।’
প্রেক্ষাপট
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শুক্রবার সন্ধ্যার প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে।এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।শতকরা হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ৫১ শতাংশ।জ্বালানি তেলের বর্ধিত এ দাম কার্যকর হয় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। এর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি তেল নিতে পেট্রল পাম্পে ভিড় জমান গাড়িচালকরা, তবে অনেক জায়গায় বন্ধ করে দেয়া হয় পেট্রল পাম্প।