স্বর্ণের দাম আরও বেড়েছে। ছয় দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের মূল্যবান এই ধাতুটির দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ২৪৭ টাকা করা হয়েছে।
অন্যান্য মানের স্বর্ণের দামও প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় টানা তিন দফা দাম কমানোর পর গত ২৬ জুলাই প্রতি ভরি সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। দুই দিনের ব্যবধানে ২৮ জুলাই আরও ২ হাজার ৭৪১ টাকা বাড়ানো হয়। বুধবার ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে আট দিনের ব্যবধানে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ১৩২ টাকা বাড়ল।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর বা ১০০ শতাংশ খাটি স্বর্ণ) মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাজুস।
এর আগে ১৭ জুলাই সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়েছিল। তার আগে ৬ জুলাই একই পরিমাণ কমানো হয়।
এরপর ২৬ জুলাই থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে।
বুধবার পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৮১ হাজার ২৯৮ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
ছয় দিনের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমরা দাম বাড়িয়েছি মূলত স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে। তেজাবি স্বর্ণ আমদানি করা হয় না। এটি দেশেই পাওয়া যায়। এই স্বর্ণ একেবারে পিওর বা ১০০ শতাংশ খাঁটি। আমাদের তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ীরা সারা দেশ থেকে পুরোনো স্বর্ণ কিনে সেগুলো মেশিনে দিয়ে খাদ বাদ দিয়ে যে স্বর্ণ আলাদা করে, সেটাকেই পিওর বা ১০০ শতাংশ খাঁটি স্বর্ণ বলে। এটাকে আমরা তেজাবি স্বর্ণ বলি।’
‘এই স্বর্ণের দামই গত কয়েক দিনে বেশ বেড়েছে। সে কারণেই আমরা দাম বাড়িয়েছি।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানো হয়।
চার দিনের ব্যবধানে ২১ মে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় বাজুস। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে স্বর্ণের দাম উঠে যায় ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায়।
বিশ্বাজারে দাম কমায় ২৬ মে সেই স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৬ জুলাই আরও ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বুধবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
‘বৃহস্পতিবার থেকে এই নতুন দর কার্যকর হবে।’
বিশ্ববাজারে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৭৫৭ ডলার ৭২ সেন্ট। এর আগে ২৮ জুলাই রাতে যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়, তখন প্রতি আউন্সের দাম ছিল ১ হাজার ৭৫০ ডলার ৬৮ সেন্ট।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে ২ হাজার ৬০ ডলারে উঠেছিল।
১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি।
বৃহস্পতিবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৮২ হাজার ৩৪৭ টাকা। বুধবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৮১ হাজার ২৯৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেড়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা।
২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে একই পরিমাণ বেড়ে ৭৮ হাজার ৬১৫ টাকা হয়েছে। এই ছয় দিন ৭৭ হাজার ৫৬৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই মানের স্বর্ণ।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৭ হাজার ৪১৮ টাকা। বুধবার পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৪৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ৫২৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৫ হাজার ৬৯৬ টাকা। এই কয় দিন এই মানের স্বর্ণ ৫৫ হাজার ১৭১ টাকা ভরিতে বিক্রি হয়েছে।
রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সকল স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত বাজুসের বেঁধে দেয়া দামে স্বর্ণ বিক্রি করতে অনুরোধ করা হয়েছে।