বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিন সুখবরে রিজার্ভের ইউটার্ন

  •    
  • ২ আগস্ট, ২০২২ ২২:২১

কয়েক দিন ধরে টানা কমে ২৬ জুলাই রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। ২৭ জুলাই তা আরও কমে ৩৯ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর থেকে বাড়তে শুরু করেছে। আমদানি ব্যয় কমার পাশপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ার কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরও সূচকটি ঊর্ধ্বমূখী হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসের ৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

১২ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির ফলে আরও কমে যায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক।

কয়েক দিন ধরে টানা কমে ২৬ জুলাই তা ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। ২৭ জুলাই তা আরও কমে ৩৯ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। আমদানি ব্যয় কমার পাশপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ার কারণে প্রতিদিন রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির পরও সূচকটি ঊর্ধ্বমূখী হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে গত এপ্রিল থেকে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিচ্ছিল সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। তার ইতিবাচক ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার (এলসি) হার কমেছে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

এই মাসে ৫৪৭ কোটি (৫.৪৭ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এলসি খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি (৭.৯৬ বিলিয়ন) ডলারের।

অন্যদিকে এই মাসে বিদেশি মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।

অর্থনীতির এই তিন সূচকের সুখবরেই রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসায় অনেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার ইচ্ছে করে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভয়ের বা আতঙ্কের কিছুই ছিল না। কেননা, তখনও আমাদের ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ ছিল।’

‘এখন সুখবর হচ্ছে আমদানি ব্যয় কমছে। একইসঙ্গে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এখন আর আমাদের চিন্তার কিছু নেই। কিছুদিনের মধ্যেই রিজার্ভ আবার ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডলারের বাজার স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া নেয়া হয়েছে; এখনও হচ্ছে। এরই মধ্যে আমদানি কমতে শুরু করেছে। আশা করছি, সবকিছু এখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রিজার্ভও বাড়বে।’

কয়েক দিন ধরে খোলাবাজার বা কর্ব মার্কেটে একই জায়গায় ‘স্থির’ রয়েছে ডলারের দর। ব্যাংকগুলোতেও একই একই অবস্থা।

মঙ্গলবার কার্ব মার্কেটে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকায় প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনলী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক ১০২ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। সপ্তাহখানেক ধরে খোলাবাজার ও ব্যাংকে এই দরে বিক্রি হচ্ছে ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। এটাকে আন্তব্যাংক লেনদেন বলে। গত দুই সপ্তাহ ধরে এই দরে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের যে মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, তাতে বাজার থেকে ডলার কেনার অবদান ছিল।

এরপর আমদানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে।

গত ১২ জুলাই আকুর ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৮০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। এর পর তা আরও কমে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়।

ডলারের বাজার ‘স্থিতিশীল’করতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাই মাসে ১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

কয়েক মাস ধরেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা ঠিক করে দিয়েছে, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।

প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার টাকার অবমূল্যায়নও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তব্যাংক লেনেদেনের ক্ষেত্রে যে দর ঠিক করেছে, ব্যাংক ও খোলাবাজারে তার থেকে অনেক বেশি দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে।

খোলাবাজারে ডলারের দাম রেকর্ড ১১২ টাকায় উঠেছিল। ব্যাংকগুলোও ১০২ থেকে ১০৮ টাকা দর রাখছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে ৯ থেকে ১৪ টাকা বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দামকে আন্তব্যাংক দর বলা হয়ে থাকে। এই দর আসলে এখন অচল। বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দরে ডলার কেনাবেচা করতে ব্যাংকগুলোকে কোনো চাপ দিচ্ছে না।

ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমতো দামে তাদের নিজের মধ্যে ডলার কেনাবেচা করছে; নগদ ডলারও বিক্রি করছে অনেক বেশি দামে।

এ হিসাবে এক বছরে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর ব্যাংক ও খেলাবাজারে বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।

অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে ওই অর্থবছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।

আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, চলে পুরো অর্থবছর।

সেই ধারাবাহিকতায় চাহিদা মেটাতে নতুন অর্থবছরেও (২০২২-২৩) ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই একই জায়গায় ‘স্থির’ছিল ডলার। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর।

আকু মে-জুন মেয়াদের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর গত ১২ জুলাই রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এরপর থেকেই রিজার্ভ নিয়ে সারা দেশে আতঙ্ক ও নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল- প্রতি মাসে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

এ বিভাগের আরো খবর