সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস ঠিক করে দেয়ার পর টানা তিন দিন উত্থান হলো পুঁজিবাজারে। প্রথম কর্মদিবসে সূচকের, দ্বিতীয় কর্মদিবসে লেনদেন এবং তৃতীয় কর্মদিবসে একই সঙ্গে সূচক ও লেনদেনের সম্মিলিত উত্থান হলো।
আগের দুই দিন যথাক্রমে ১৫৩ ও ৩০ পয়েন্ট সুচক বাড়ার পর সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বাড়ল ৮৫ পয়েন্ট। আর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়িয়ে হয় ১ হাজার ১৮৩ কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
এই লেনদেন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই যুদ্ধ শুরুর পর ১০ মে ১ হাজার ২৫৮ কোটি ৫৮ হাজার টাকা লেনদেনই সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় তার আগের দিন ১ হাজার ২০৮ কোটি ৩১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
গত ১৬ জুলাইয়ের পর লেনদেন প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়াল। আর
চলতি সপ্তাহের আগের তিন সপ্তাহের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ১১ দিনই পতন হয় পুঁজিবাজারে। দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা ২ শতাংশ ও এর আশেপাশে দর হারাতে থাকে শেয়ারগুলো।
এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার পতন রোধে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বৃহস্পতিবারসহ আগের পাঁচ কর্মদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় করে সব শেয়ারের দর নির্ধারণ হয়।
সেদিন লেনদেন ছিল ৪৪১ কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এরপর ফ্লোর প্রাইস কার্যকরে প্রথম দিন পাঁচ শ কোটির ঘর, দ্বিতীয় দিন নয় শ কোটির ঘর অতিক্রম করে। তৃতীয় দিনে তা আরও দিল লাফ।
কোনো কোম্পানির শেয়ারদর একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের নিচে নামতে পারবে না, এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার কেনা শুরু করেছে।
লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ২৯০টির। কমেছে ৩৬টির এবং আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ৫৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটি।
ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হওয়ার পর তিন দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বাড়ল ২৬৮ পয়েন্ট
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থবছর শেষে যে বিনিয়োগটা আসার কথা ছিল সেটা পুঁজিবাজারের অস্থিরতার কারণে আটকে ছিল। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কারণে কনফিডেন্স লেভেলটা বেড়েছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে শেয়ারদর কমার সুযোগ নেই। যার কারণে যে সকল বড় বিনিয়োগকারী সাইড লাইনে ছিলেন, বাজার পর্যবেক্ষণ করছিলেন তারাও অ্যাক্টিভিটি বা বিনিয়োগ শুরু করেছে। এটিই বাজারের সূচক ও ট্রানজেকশন বাড়িয়েছে।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২০১ টাকা ৭০ পয়সায়। এ নিয়ে টানা চার কর্মদিবস দর বাড়ল শেয়ারটির।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির। চলতি বছরের ১৪ জুলাই থেকে কোম্পানির ঈর্ষণীয় দরবৃদ্ধি হয়েছে। ওই দিন ৬ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটির দর বেড়ে মঙ্গলবার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সায়।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে মালেক স্পিনিং। টানা তিন কর্মদিবস দর বাড়ল শেয়ারটির। প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ৩০ পয়সায়।
গতবছরই লোকসান কাটিয়ে আয়ে ফিরে কোম্পানিটি। আগের বছরগুলোতে ধারাবাহিক মুনাফায় থাকলেও ২০২০ সালে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৬৮ পয়সা লোকসান হয়। পরের বছরই লোকসান কাটিয়ে কয়েকগুণ বেশি মুনাফা করেছে মালেক স্পিনিং।
২০২১ সালে ৩ টাকা ৩৬ পয়সা আয়ের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ পেয়েছেন ১০ শতাংশ বা শেয়ারের বিপরীতে ১ টাকা।
শীর্ষে দশে জায়গা করে নিয়েছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অ্যাপেক্স স্পিনিং, এনআরবিসি ব্যাংক, অ্যামবি ফার্মা, আর্গন ডেনিম ও পেপার প্রসেসিং।
দর পতনের শীর্ষ ১০
এই তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে এনভয় টেক্সটাইল। চার কর্মদিবস উত্থানের পরে মঙ্গলবার দর কমল ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৫০ টাকা ৭০ পয়সা। আজ সেটি দাঁড়িয়েছে ৪৮ টাকা ৭০ পয়সায়।
এর পরেই ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর কমেছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের। সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায়।
তৃতীয় স্থানে থাকা ফিনিক্স ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ১০ টাকা ৯০ পয়সা, বর্তমান দর দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৭০ পয়সা।
এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে এমবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড-১, ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি, অ্যাপোলো ইস্পাত ও এমএল ডায়িং লিমিটেড।
সূচক বাড়াল যারা
সবচেয়ে বেশি ৮ দশমিক ১৩ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির দর ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ দর বেড়েছে।
বেক্সিমকো ফার্মার দর ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।
ওয়ালটন হাইটেক সূচকে যোগ করেছে ৩ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ।
এ ছাড়া ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, তিতাস গ্যাস, ব্র্যাক ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক ও লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৩২ দশমিক ২৩ পয়েন্ট।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ১৬ পয়েন্ট সূচক কমেছে আইসিবির কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমিয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ।
রেনাটার দর শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ১ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট।
এ ছাড়া এনভয় টেক্সটাইল, বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, স্কয়ার টেক্সটাইল, এমএল ডায়িং, জেএমআই হসপিটাল, অ্যাপোলো ইস্পাত ও বিডি থাই ফুডের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।