বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লেনদেন ভারসাম্যে ১৮.৭০ বিলিয়নের রেকর্ড ঘাটতি

  •    
  • ১ আগস্ট, ২০২২ ২১:০৬

‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের ঊর্ধ্বমূল্য আমদানি খরচ বাড়ার একটি কারণ। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এই ব্যয় বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে।’

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বিশাল বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হলো ২০২১-২২ অর্থবছর। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন (১ হাজার ৮৭০ কোটি) ডলার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে এত বড় ঘাটতি দেখা যায়নি। আমদানির উল্লম্ফনে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকে এই বেহাল দশা হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।

৩০ জুন ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে। এক মাস পর সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ওই বছরের ব্যালান্স অফ পেমেন্টের তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, মহামারি করোনা ভাইরাসের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ওলটপালট হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য, জাহাজ ভাড়াসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। আর সে কারণেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।

আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সূচক মাত্র ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন (৪৫৭ কোটি ৫০ লাখ) ডলার ঘাটতি ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছর শুরুই হয়েছিল লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে। প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৭ কোটি ডলার। এভাবে আমদানি ব্যয় বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতি মাসেই বেড়েছে ব্যালান্স অফ পেমেন্টের ঘাটতি।

এই ঘাটতি সামষ্টিক অর্থনীতিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক লেনদেনে এই বিশাল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কথা ঠিক যে, আমদানি বাড়ার একটা ভালো দিকও আছে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ে; কর্মসংস্থান হয়। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়। তবে ব্যালান্স অফ পেমেন্টে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সত্যিই উদ্বেগের, চিন্তার বিষয়। এই ঘাটতির কারণেই বৈদেশিক মুদ্রাবাজার তথা ডলারের বাজারে অস্থিরতা বা সংকট দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার ছেড়েও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের ঊর্ধ্বমূল্য আমদানি খরচ বাড়ার একটি কারণ। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এই ব্যয় বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে।’

এ অবস্থায় আমদানি কমাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।

বেশ কয়েক বছর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ। প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ওই বছর।

তার আগে ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।

অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই উদ্বৃত্ত ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।

আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত

তবে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) এখনও বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের ১৪ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে জানান আহসান মনসুর।

বাণিজ্য ঘাটতি ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর পর থেকেই আমদানিতে জোয়ার বইছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধানও চূড়ায় উঠতে শুরু করে।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রেও রেকর্ড হয়েছে। এর আগে কখনই এত বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি দেশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের ৮২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরে ৬০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

অন্যদিকে গত অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৯ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবেই ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বেড়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

রেমিট্যান্স কমেছে ১৫.১২ শতাংশ

গত অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ২৪ দশুমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

এ বিভাগের আরো খবর