বৈশ্বিক গ্যাস সংকটের কারণে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত দুই ইউরিয়া সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউরিয়া সারের দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তার পরও এই সারে কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি গুনতে হবে সরকারকে।
দেশের দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চট্টগ্রাম ফার্টিলাইজার লিমিটেড ও যমুনা ফার্টিলাইজার লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩৭ লাখ ২৯ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ছিল ২৬ লাখ টন। বর্তমানে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন। গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে এ দুটি কারখানাতেই সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আর ইউরিয়া উৎপাদনের জন্য ইউএফ-৮৫ এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই নিশ্চিত করা হয়েছে, দেশে এই মুহূর্তে সারের সংকট নেই। পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। এর মধ্যেও ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে সোমবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আগে কৃষক এই সার ১৬ টাকা কেজি দরে কিনতে পারতেন। এখন থেকে তা কিনতে হবে ২২ টাকা কেজি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের বর্তমান দাম ৮১ টাকা। এর ফলে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারে ভর্তুকি ছিল ১৫ টাকা।
ডিএপি সারে ১৮ শতাংশ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সে জন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে ডিএপি ব্যবহার হতো আট লাখ টন। বর্তমানে এই সার ব্যবহার হচ্ছে ১৬ লাখ টন।
ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ায় ইউরিয়ার ব্যবহার কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা না কমে উল্টো বেড়েছে। সালে ইউরিয়া ব্যবহার হতো ২৫ লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন।
গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশে সারে প্রদত্ত সরকারের ভর্তুকিও সমহারে বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আমন মৌসুম (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ৬ লাখ ১৯ হাজার টন। এর বিপরীতে মজুত রয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার টন। সে হিসাবে মজুতের পরিমাণ চাহিদার চেয়ে প্রায় এক লাখ টন বেশি।
অন্যান্য সারের মধ্যে আমন মৌসুমে টিএসপির চাহিদা ১ লাখ ১৯ হাজার টন। এর বিপরীতে মজুত ৩ লাখ ৯ হাজার টন। ডিএপির চাহিদা ২ লাখ ২৫ হাজার টন, বিপরীতে মজুত আছে ৬ লাখ ৩৪ হাজার টন এবং এমওপির চাহিদা ১ লাখ ৩৭ হাজার টন, বিপরীতে মজুত রয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টন।