বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অভিযানে উত্তাপ কমে স্থির ডলারের দাম

  •    
  • ১ আগস্ট, ২০২২ ১৭:২২

এক বছরে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর ব্যাংক ও খেলাবাজারে বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে ব্যাংক ক্ষেত্রবিশেষে ১০ টাকা আর খোলাবাজারে ১৮ টাকা বেশিতে বিক্রি হতে দেখে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে আমেরিকান মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমে।

ভয়-আতঙ্কে থমকে আছে ডলারের বাজার। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই উধাও; লেনদেন নেই বললেই চলে। অতি গোপনে দু-একটা লেনদেন হচ্ছে। গত সপ্তাহের তেজিভাবও কমে এসেছে।

খোলাবাজারে সোমবার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে ১০৮ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত মঙ্গলবার এক লাফে ১১২ টাকায় উঠে গিয়েছিল ডলার।

ব্যাংকগুলোতেও একই অবস্থা। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার যে দামে নগদ ডলার বিক্রি করেছিল ব্যাংকগুলো, চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিন রোব ও সোমবারও সেই দামেই ডলার বিক্রি করেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক সোমবার ১০২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ও সিটি ব্যাংক প্রতি ডলারের জন্য নিয়েছে ১০৭ টাকা।

গত কয়েক দিনের মতো ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে সোমবার ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটাকে আন্তব্যাংক বা ইন্টারব্যাংক রেট বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু এই রেট গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অচল।

ব্যাংকগুলো এখনও এই দরের চেয়ে ৬ থেকে ১২ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। আবার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে ১০৪-১০৫ টাকা দিয়ে। আমদানি ঋণপত্র খুলতেও নিচ্ছে ১০৪-১০৫ টাকা।

খোলাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির কারণে অনেক ব্যবসায়ীই ডলার কেনাবেচা করতে ভয় পাচ্ছেন।

খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে গত বুধবার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন মানি চেঞ্জারে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এ পরিদর্শন কার্যক্রম চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পাশাপাশি অবৈধভাবে ডলার মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ফলে ডলারের বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখন নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সোমবারও এনএসআই সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে কয়েকটি মানি চেঞ্জার পরিদর্শন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ পরিদর্শন অব্যাহত থাকবে। রেমিট্যান্স বাড়ছে। আমদানি কমছে। আশা করছি খুব শিগগিরই ডলার বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় সোমবার খোলাবাজারে কোনো ডলার কেনাবেচা হতে দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে ব্যবসায়ীরা ডলার কেনাবেচা করতে ভয় পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কার্ব মার্কেটের এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে আছি ভাই আমরা। দুই দিন বাসা থেকে বেরই হইনি। খবর নিয়ে জেনেছি, কোনো ব্যবসায়ীই ডলার কেনাবেচা করছে না। একটা-দুইটা লেনদেনের খবর পেয়েছি; তাও খুব গোপনে হয়েছে।’

বেশ কিছুদিন ধরে চলা ডলারের অস্থির বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে বিলাসবহুল এবং অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটার পর একটা পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিন্তু বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছিল, ডলারের বাজারে অস্থিরতা ততই বাড়ছিল। পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছিল ডলার। নিয়মিত দামি হচ্ছিল, সেই সঙ্গে পড়ছিল টাকার মান।

কয়েক মাস ধরেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা ঠিক করে দিয়েছে, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দামকে আন্তব্যাংক দর বলা হয়ে থাকে। এই দর আসলে এখন অচল। বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দরে ডলার কেনাবেচা করতে ব্যাংকগুলোকে কোনো চাপ দিচ্ছে না।

ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমতো দামে তাদের নিজেদের মধ্যে ডলার কেনাবেচা করছে; নগদ ডলারও বিক্রি করছে অনেক বেশি দামে।

এ হিসাবে এক বছরে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর ব্যাংক ও খেলাবাজারে বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

এদিকে বাজার ‘স্থিতিশীল’ করতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবারও ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১৪ কোটি (১.১৪ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা) তুলে নেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর