বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৩০ বছর অপেক্ষার পর এনবিআরের নিজস্ব ভবন

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২২ ০৮:২২

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ৬০ ফুট সড়কের মোড়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত আধুনিক এই কার্যালয়ের নির্মাণকাজ শেষের পথে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। এই ভবনে রাজস্ব বোর্ডের সব অফিস স্থানান্তরিত হবে। সেপ্টেম্বরে এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান দুই দশক আগে এক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো ‘রাজস্ব ভবন’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে দুঃখ করে বলেছিলেন, এ দেশে কৃষি ভবন হয়, মাছের দেখা নেই তবু মৎস্য ভবন হয়। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আরও কত কী ভবন হয়েছে। অথচ যে সরকারি সংস্থা জাতীয় বাজেটের ৮৫ শতাংশ অর্থ জোগান দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, তার নিজস্ব কোনো ভবন নেই। এটা মেনে নেয়া যায় না।’

বেঁচে থাকাকালীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিজস্ব ভবন দেখে যতে পারেননি সাইফুর রহমান। বর্তমান সরকার যখন প্রথবমারের মতো ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে, তখনকার অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এম এস কিবরিয়াও চেষ্টা করে সফল হতে পারেননি।

১৯৯২ সালে সর্বপ্রথম রাজস্ব ভবন নির্মাণে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে মামলা-মোকাদ্দমাসহ নানা কারণে ভবনের কাজ বারবার পিছিয়ে যায়। ভবন হবে কি হবে না, তা নিয়ে একপর্যায়ে তৈরি হয় অনিশ্চিয়তা।

নানা প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটিয়ে ৩০ বছরের চেষ্টায় অবশেষে সেই ভবন আলোর মুখ দেখছে। শিগগিরই এনবিআর পেতে যাচ্ছে নিজস্ব ভবন।

‘নতুন ভবনের কাজ প্রায় শেষের পথে। শেষ মুহূর্তে কিছু ঘষামাজার কাজ চলছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলেই উদ্বোধন করা হবে বহুল প্রত্যাশিত অত্যাধুনিক রাজস্ব ভবন।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ৬০ ফুট সড়কের মোড়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত আধুনিক এই কার্যালয়ের নির্মাণকাজ শেষের পথে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। সেপ্টেম্বরে এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ৭৬ নম্বর অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর সৃষ্টি হয়। আর ৫০ বছরে সংস্থাটির রাজস্ব আহরণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার গুণ। যে সংস্থাটি সরকারের বেশির ভাগ রাজস্ব আদায় করে দেয়, এত দিন তার কোনো নিজস্ব ভবন ছিল না। শেষ পর্যন্ত রাজস্ব কর্মকর্তাদের প্রত্যাশিত সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।

এখন সেগুনবাগিচায় যে রাজস্ব ভবন আছে সেটি অনেক পুরোনো। পাকিস্তান আমলে এখানে সচিবালয় ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছুদিন কাজ চলে এখানে। তার পর সচিবালয় চলে যায় প্রেস ক্লাবের পাশে। আর সেগুনবাগিচায় পুরাতন সচিবালয়ে থেকে যায় এনবিআর। সেই থেকে এখন পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ডের যাবতীয় কাজ এখান থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

সেগুনবাগিচায় যে রাজস্বভবন আছে সেটি অনেক পুরানো। পাকিস্তান আমলে সেখানে সচিবালয় ছিল। ফাইল ছবি

বর্তমানে এনবিআরের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখানে বসেন। এর বাইরে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ভাড়ায় অফিস করেন।

সারা দেশে প্রায় ছয় শতাধিক আয়কর অফিস এবং তিন শতাধিক ভ্যাট অফিস আছে। এর বাইরে আছে কর অঞ্চল, কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন। ভাড়া দিয়ে এসব অফিস চালায় এনবিআর। এ জন্য সরকারের প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়।

এনবিআরের অধীনে কাস্টমস ও আয়কর বিভাগের প্রায় ৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন।

নতুন ভবনটির ২০ তলা পর্যন্ত ভিত্তিপ্রস্তর থাকলেও ১২ তলা সম্পন্ন হয়েছে। এই ভবনে রাজস্ব বোর্ডের সব অফিস যাবে। দুটি আপিল ও ট্রাইবুন্যাল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), দুটি লার্জ ট্যাক্স পেয়ার ইউনিটের অফিসও যাবে।

এর পাশাপাশি আগারগাঁও নির্বাচন অফিসের সামনে রাজস্ব ভবন-২-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ভবনের কাজ শেষ হলে এখানে মাঠপর্যায়ের অনেক অফিস স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

যোগাযোগ করা হলে রাজস্ব ভবন প্রকল্পের পরিচালক ও কর কমিশনার লুৎফুল আজীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন ভবনের কাজ প্রায় শেষের পথে। শেষ মুহূর্তে কিছু ঘষামাজার কাজ চলছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলেই উদ্বোধন করা হবে বহুল প্রত্যাশিত অত্যাধুনিক রাজস্ব ভবন।’

এনবিআর সূত্র বলেছে, ভবন বানাতে ৪৫১ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে খরচ হয়েছে ৪১২ কোটি টাকা। বাকি ৩৯ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।

এনবিআর বলেছে, দৃষ্টিনন্দন এ ভবনে এলে সরকারি অফিস সম্পর্কে করদাতা ও দর্শনার্থীদের গতানুগতিক ধারণা পাল্টে যাবে। কারণ এখানে আধুনিক সব সুবিধা থাকবে। অবকাঠামোগত সুবিধা থাকায় এখানে করদাতাদেরও দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

২০০৮ সালে জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। কিন্তু জমি নিয়ে জটিলতার কারণে সাত বছর দেরিতে ২০১৫ সালে কাজ শুরু হয়।

পেছনের কথা

১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো রাজধানী আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য কর বিভাগের অনুকূলে দুই একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় সেখানে কাজ শুরু করতে পারেনি এনবিআর। পরে ২০০১ সালে বর্তমান জায়গায় দুই একরের প্লট বরাদ্দ পায় এনবিআর।

সেখানেও বিপত্তি বাধে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। এর পরের বছর ২০০২ সালে জমি বরাদ্দ পেলেও বুঝে পেতে বিলম্ব হয় ছয় বছর। তবে জমি বুঝে না পেলেও ওই বছরই প্রথবারের মতো ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তখনকার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান।

এর ছয় বছর পর ২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয় একনেকে। জমি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হলে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর।

এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হয়ে যায়। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। বিশেষ করে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে পরিসর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়।

প্রথমে ১২ তলা ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ পায় বহুল আলোচিত ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির হোতা জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা মূল ভবনের কাঠামো তৈরি করে। জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর কাজ বন্ধ থাকে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য তাহের ব্রাদার্স অ্যান্ড হোসেন কনস্ট্রাকশন জেভিকে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়।

যে কারণে বিলম্ব

প্রকল্পের শুরুতে ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১২ তলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল। পরে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন ছাড়াই ৩০ তলা ভিত্তির ওপর ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সেখান থেকে শুরু হয় বিপত্তি। এরপর তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

২০১৫ সালে এনবিআরের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ২০ তলার বদলে ৪০ তলা ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আন্ত মন্ত্রণালয় সভার আহ্বান করেন।

ওই সভায় ৩০ তলা ভবন নির্মাণে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। অদূর ভবিষ্যতে শেরেবাংলা নগরের প্রশাসনিক এলাকায় বেবিচকের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে- এমন চিন্তা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তা নেয়নি এনবিআর। এ নিয়ে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় এনবিআর ভবনের সংশোধিত ব্যয় অনুমোদন করা হয়। অনুমোদিত ব্যয় ১৪১ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫১ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

এ প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০ তলা না করে ১২ তলা ভবন করতে হবে। কেননা বিমানবন্দর কাছাকাছি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১২ তলার কাজ সম্পন্ন করেছে এনবিআর।

এ বিভাগের আরো খবর