আন্তর্জাতিক ঋণমাণ সংস্থা মুডিস বলেছে, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে; তবে সংকটের ঝুঁকি কম।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে নিয়ে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কম হলেও দেশটির অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের মুডিস-এর সার্বভৌম বিশ্লেষক ক্যামিল চৌটার্ড বাংলাদেশকে নিয়ে বলেন, ‘প্রধান বার্তাটি হলো যে যদিও দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাম্প্রতিক সময়ে কমছে। তবে এটি উচ্চস্তর থেকে এবং সার্বভৌমের বাহ্যিক দুর্বলতার সূচক কম।’
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দর বেড়ে যাওয়ার মধ্যে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। পণ্য ও জ্বালানি মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ কমেছে অনেকটাই। দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তা নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
কয়েক মাসের মধ্যে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে খোলাবাজারে দাম উঠেছে ১১২ টাকা। এমনকি ব্যাংকগুলো বিক্রি করছে ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায়।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি নিয়ে দেশে আতঙ্ক স্পষ্ট। আর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে আক্রমণ করছে এই বলে যে দেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার মতো পরিণতির দিকে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো। আর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলেও এটি বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় মেটানোর চেয়ে বেশিই আছে। তিনি বলেছেন, তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট, কিন্তু দেশের রিজার্ভ নিয়ে মেটানো যাবে ৯ মাসের আমদানি ব্যয়।
রিজার্ভে চাপ কমাতে আমদানি হ্রাসেও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর ফলে আমদানিতে টানও পড়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমেফের কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণও চাওয়া হয়েছে।
মুডিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গেছে। রিজার্ভ বাড়াতে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমাতে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চেয়েছে।
‘সরকার ব্যয় সংকোচনের জন্য বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে আমেরিকান মুদ্রা ডলারের ঘাটতির মধ্যে ডলার মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে।’
গত ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক বছর আগের ৪৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৩৯ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশের অর্থনীতির দুর্দশায় যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ছিল।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ভবিষ্যতের যেকোনো প্রয়োজন মেটাতে আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন নই।’
মুডিসের চৌটার্ড বলেন, ‘কম রেমিট্যান্সের নিম্নগতি, রপ্তানি আয়ের কম চাহিদা এবং জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের চড়া মূল্যের কারণে আমরা চলতি হিসাবের ঘাটতির অবনতি আশা করেছিলাম। এই চাপগুলো বাড়ছে এবং সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।’