বাজারে বিনিয়োগ করলে উত্তেজিত হওয়া যাবে না বলে পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। বলেছেন, গুজবে কান দিয়ে কষ্টের টাকায় কেনা শেয়ার নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
শুক্রবার ময়মনসিংহের টাউন হলে বিএসইসি ও বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট- বিএএসএম আয়োজিত দুইদিনের বিনিয়োগ শিক্ষা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে শুরু হওয়া দর সংশোধন সম্প্রতি ধসে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি গিয়ে উৎকণ্ঠাও স্পষ্ট।
দেশে দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়নের যে বিষয়টি দেখা যাচ্ছে, তার বাইরে নয় বাংলাদেশও। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে রিজার্ভে পড়ছে টান।
প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো ভালো হলেও নানা গুজব-গুঞ্জনে পুঁজিবাজারে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
ময়মনসিংহে বিএসইসি বিএএসএম আয়োজিত দুইদিনের বিনিয়োগ শিক্ষা মেলার উদ্বোধন করছেন শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ
১৩ মাস পর মূল্যসূচক প্রথমবারের মতো নেমে গেছে ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে। এর মধ্যে গত সপ্তাহের পুরোটা, তার আগের সপ্তাহের শেষ তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ধসের মধ্য দিয়ে টানা ৯ কর্মদিবসে সূচক পড়ে ৩১৪ পয়েন্ট।
এই পরিস্থিতিতে বিএসইসি প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস ফিরিয়ে এনেছে, যে কৌশলে ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের পর পুঁজিবাজারে ধস ঠেকানো গিয়েছিল।
শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বিনিয়োগকারীরা বেশি উত্তেজিত হয়ে নিজের ক্ষতি করছেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন যায়গায় দেখছি সবাই লেখালেখি করছে, দেশে তেল শেষ, জ্বালানি শেষ। এগুলো সব গুজব। আর গুজবে কান দিয়ে বাজারের বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টের টাকায় কেনা শেয়ার নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘এসব গুজবে কান দেবেন না। আমাদের তেল সংরক্ষণের ক্ষমতা ৪০ দিন বা তার একটু বেশি। ইতিমধ্যে ৩৬ দিনের তেল আমাদের দেশে মজুদ আছে। আগস্ট মাসে আরও ৮ টি জাহাজে করে তেল আসছে দেশে। তাই প্যানিক হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না।’
ময়মনসিংহে বিএসইসি বিএএসএম আয়োজিত দুইদিনের বিনিয়োগ শিক্ষা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে বিএসইসির কমিশনার বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এই শিক্ষা অতি জরুরি। এর কোনো বিকল্প নেই। এটি ক্রমাগত পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন হচ্ছে। বিনিয়োগ শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা থেকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হওয়া যায়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী শুরু করেছেন বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ময়মনসিংহে আমাদের এ কার্যক্রম।’
বিএসইসি কমিশনার রুমানা ইসলাম, সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, বিনিয়োগ শিক্ষা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, সহ আয়োজন প্রতিষ্ঠান বিএএসএম মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ- ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া, স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন- ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও, রশীদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশীদ লালীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।