সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় রাজধানীর বাজারে এর দামে প্রভাব পড়েছে। আগের চেয়ে বেশ কম দামে কেনা যাচ্ছে ইলিশ মাছ। এ ছাড়া সবজির দামও মোটামুটি স্থিতিশীল। দাম বাড়েনি মাংসের, নির্ধারিত দরেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি কারওয়ান বাজার ও মগবাজার ঘুরে শুক্রবার এমন চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকা দরে, যা কয়েক দিন আগেও ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। আর মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। দাম কমায় ইলিশের বাজারে গিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তাদের মনে বইছে খুশির হাওয়া।
বাজারে অধিকাংশ সবজির দামই স্থিতিশীল আছে। তবে বেশ বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে কাঁচা মরিচের দামে প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
করলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। এ ছাড়া পেঁপে ২০ টাকা, ঢ্যাঁঢ়শ ২৫ টাকা, কাঁকরোল ৩০ টাকা, বেগুন ৩৫ টাকা এবং পটোল ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লেবু প্রতি ডজন ৩০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, ‘কাঁচা মরিচের ঝাল বেড়েছে।’ আর বিক্রেতারা বলছেন, জোগান স্বাভাবিক না থাকায় দাম বেড়েছে।
যে কাঁচামরিচ চার দিন আগেও ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, তা এখন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম উঠেছে ২০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সোলায়মান নিউজবাংলাকে বলেন, বাজারে কাঁচামরিচ নাই, দাম তো বাড়বোই। হঠাৎ কেন দাম বাড়ল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বৃষ্টির লাইগা কাঁচা মরিচের ক্ষেত নষ্ট হইছে আর বন্যা তো আছেই।
একই ধরনের যুক্তি দিলেন মগবাজারের সবজি বিক্রেতা তাহের মিয়া তিনি বলেন, সিলেটে বন্যার কারণে এই অবস্থা হইছে ভাই, লগে তো বৃষ্টি আছেই।
বাজার করতে আসা আসিফ মাহমুদ বলেন, সবজি দাম ঠিক আছে কিন্তু কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিক, যা সাধ্যের বাইরে।
একই সুরে কথা বললেন মাসুম আলী। তিনি বলেন, ‘সবজি ঠিক আছে তবে কাঁচা মরিচের ঝাল একটু বেশিই।
জোগান স্বাভাবিক থাকায় প্রায় সব মাছের দামই স্থিতিশীল। তবে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কমেছে রুপালি এ মাছের দাম। সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত শনিবার মধ্যরাতে উঠে গেছে। ওই দিনই সাগরে ছুটে গেছেন হাজার হাজার জেলে।
বাগদা চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৬০০ ও গলদা ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে আইড়, চিতল, বেলে মাছ আকারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, তবে জ্যান্ত রুই কিনতে আরও ৫০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
সবজি ও মাছের মতো স্থিতিশীল আছে মাংসের বাজারও। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায়। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা কেজিতে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা কেজিতে।
কারওয়ান বাজারের কিবরিয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী তালেব মিয়া বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা দরে। ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৩৭০ টাকা।
আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১০ টাকা। আর ৫ লিটারের রাইস বেন অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
অন্যদিকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে ১৬৬ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫২ টাকায়।
বাজারে ভোক্তা অধিকারের অভিযান
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তারা দুই দোকানিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এসময় এক দোকানিকে মূল্য তালিকা না থাকায় ১০ হাজার আর ওজনে কারচুপি করায় এক মাছ বিক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, বাজারের অবস্থা স্থিতিশীল, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে দুই দোকানিকে দুই দোকানিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মূল্য তালিকা না থাকায় একজনকে ১০ হাজার আর ওজনে কারচুপি করায় এক মাছ বিক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা।