অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে দেশে ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়েবলিংক কার্যক্রমও স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আরও কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণ হলে সেগুলোও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে।
দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করছে। বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে আগেই। এরপর এসব অভিযোগের ভিত্তি যাচাইয়ে নেমে প্রাথমিক তদন্তে ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলে।
অনলাইন মাধ্যমে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনার দায়ে বন্ধ হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- থলেডটকম, গ্লিটার্স আর এসটি ওয়ার্ল্ড, এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেড, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এগ্রো ফুড অ্যান্ড কনজিউমার লিমিটেড, আলিফ ওয়ার্ল্ড ও গ্রীন বাংলা ই-কমার্স লিমিটেড।
তদন্তে বের হয়ে এসেছে অভিযুক্ত এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানেরই ওয়েবলিংক স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীল সূত্রমতে, ডিজিটাল কমার্স সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড তথা ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সংঘটন, লেনদেন সৃষ্ট ভোক্তা বা বিক্রেতা অসন্তোষ, প্রযুক্তিগত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির ষষ্ঠ সভায় সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে আন্তমন্ত্রণালয়ের এই অভ্যন্তরীণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও ডিজিটাল কমার্স সেলপ্রধান মো. হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জারি করা ২০২১ সালের ই-কমার্স নির্দেশিকার ধারা ৩.১.৩ অনুযায়ী ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্সের মাধ্যমে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। কিন্তু আমাদের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল যে কয়েকটি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান অনলাইন ওয়েবলিংক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লিংক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
‘এই অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজিটাল কমার্স সেল নিজস্বভাবে প্রাথমিক তদন্ত করে দেখেছে যে বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দেয়া অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার ডিজিটাল কমার্স সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে তোলা হয়। বৈঠকে নিয়মবহির্ভূতভাবে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনাকারী ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ডিজিটাল কমার্স সেলপ্রধান জানান, টেকনিক্যাল কমিটি এই ছয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সহযোগিতা লাগবে। কারণ সব ধরনের অনলাইন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবলিংক নিয়ন্ত্রণ করে বিটিআরসি। তাই টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রোববারই বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হবে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবলিংক বিটিআরসি বন্ধ করে দেয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
জানা গেছে, দেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান অফলাইন মাধ্যমে বহু বছর ধরে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এমনকি অনেক মোবাইল ফোন অপারেটরও কমিশনিং সিস্টেমে অফলাইনে এমএলএম ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বন্ধ হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর এমএলএম ব্যবস অফলাইনে চালু থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এটি একান্তই অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়। তারা চাইলে সেটি করতে পারে। তবে কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনলাইন মাধ্যমে এমএলএম ব্যবসা করতে পারবে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল কমার্স সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির এই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বিটিআরসি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি, এফবিসিসিআই, এটুআই প্রকল্প ও ক্যাব মনোনীত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।