বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতনের মধ্যে আবার প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণের পর বাজারে ধস ঠেকাতে এই উদ্যোগ সফল হয়েছিল। এবারও এই উদ্যোগ ধস ঠেকাবে বলে আশা করছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে, যা আগামী কর্মদিবস থেকেই কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দর সংশোধনে যাওয়ার পর পুঁজিবাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে শুরু হয় নতুন এক সংকট।
১৩ মাস পর মূল্যসূচক প্রথমবারের মতো নেমে গেছে ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে। এর মধ্যে গত সপ্তাহের পুরোটা, তার আগের সপ্তাহের শেষ তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ধসের মধ্য দিয়ে টানা ৯ কর্মদিবসে সূচক পড়ে ৩১৪ পয়েন্ট।
বিএসইসি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান জানান, ফ্লোর প্রাইস তাদের পছন্দ না হলেও বাস্তবতার আলোকে দিতে হয়েছে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সবসময় যেটা বলি, এখনই তাই বলব, রেগুলেটর হিসেবে এভাবে ইন্টারফেয়ার করা মার্কেটের জন্য ভালো নয়। ঠিকও না। যখন দেখলাম যে, বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে পুঁজিবাজারে যে পতন এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের খুব ব্লিডিং হচ্ছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছে।’
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার ফলে আগের মতোই লেনদেন কমে যাবে বলে আশঙ্কায় শিবলী রুবাইয়াত। তবে এতে আতঙ্ক কমবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘দরপতন থেমে যাবে। কিন্তু ট্রানজেকশন কমে যাবে। কিন্তু আমার কিছু করার নাই। আগের মতো তিন-চার হাজারে সূচক নিয়ে গিয়ে মানুষকে ধ্বংস করবে না। তার আগে ছয় হাজারেই থামাই।’
কোন কোম্পানির ফ্লোর কত
বিএসইসির আদেশে জানানো হয়েছে, গত ৫ কর্মদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় হবে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস।
আগামী কর্মদিবস থেকে রোববার থেকে কোনো শেয়ারের দর এর নিচে নামবে না।
প্রথম যখন ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়, তখন রাইট বা বোনাস শেয়ারের পরও দর সমন্বয় হতো না। পরে সেটি সংশোধন করে রাইট ও বোনাস শেয়ারের সঙ্গে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
তবে এবার ফ্লোর প্রাইস দেয়ার আদেশেই এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোম্পানির বোনাস শেয়ার বা রাইট শেয়ারের কারণে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজের দর সমন্বয় হবে।
নতুন শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রথম দিনের লেনদেনের ক্লোজিং প্রাইসকে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
পুঁজিবাজারে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে বিএসইসির আদেশ
ফ্লোর প্রাইস প্রথমে কবে
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে পুঁজিবাজারে ধস নামে। প্রতিদিনই শেয়ারদর ক্রমেই কমার পাশাপাশি কমে আসছিল লেনদেন।
এই পরিস্থিতিতে ওই বছরের ১৯ মার্চ প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করা হয় ফ্লোর প্রাইস। আগের পাঁচ কর্মদিবসের দরের গড় হিসাব করে এই ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়।
এই সিদ্ধান্তে বাজারে আতঙ্ক থামে। পরে কয়েক ধাপে তুলে নেয়া হয় ফ্লোর প্রাইস।
২০২০ সালের মে মাস থেকে পুঁজিবাজার উত্থানে ফেরে। প্রথমে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়।
এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছিল কমই। আর ফ্লোর প্রত্যাহারে প্রথম কয়েক দিন দর ঢালাওভাবে কমার পর সেসব কোম্পানির দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ করে দেয়া হয়। এরপর দেখা যায়, এই ৬৬টি কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপক লেনদেন হচ্ছে আর একপর্যায়ে বেশির ভাগ কোম্পানির দর ফ্লোর প্রাইসকে ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় দফায় ৩ জুন বাকি ৩০টি কোম্পানির ফ্লোর প্রত্যাহারের পরেও একই চিত্র দেখা দেয়।
এই ৯৬টি কোম্পানির চিত্র পর্যালোচনা করে ১৭ জুন ফ্লোর প্রাইস পুরোপুরি তুলে দেয়া হয়।