বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যে আতঙ্কের কথা বলাবলি হচ্ছে, তা অমূলক বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ যা আছে, সেটি ভালো। অনেক উন্নত দেশের চেয়েও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এমনটা বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এই সাক্ষাৎ করে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দর বেড়ে যাওয়ার মধ্যে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। পণ্য ও জ্বালানি মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ কমেছে অনেকটাই। দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তা নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
কয়েক মাসের মধ্যে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে খোলাবাজারে দাম উঠেছে ১১২ টাকা। এমনকি ব্যাংকগুলো বিক্রি করছে ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায়।
এফবিসিসিআই প্রধান বলেন, ‘গরিব মরে অভাবে আর বড়লোক মরে হুতাশে, বাংলাদেশের এখন সেই অবস্থা। অর্থনীতি নিয়ে যে আতঙ্ক তা অমূলক। বড় ধরনের কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই। আমাদের রিজার্ভ ভালো আছে। অনেক উন্নত দেশ থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক মজবুত আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এটা ওভারকাম করতে পারলে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। এমন অবস্থায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা দরকার।’
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিরতার পেছনে যেসব ব্যবসায়ী ও ব্যাংক দায়ী তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা। বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে এলসি খুলতে সমস্যা হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলো যেন সজাগ দৃষ্টি রাখে।’
ঋণ পুনঃতফসিলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত যেন সমান সুযোগ পায় সে বিষয়েও সুযোগ চায় এফবিসিসিআই।
গ্ৰুপ ঋণের ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের দাবি ছিল, গ্রুপের কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ যদি খেলাপি হয়ে যায় তবে পুরো গ্রুপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠান খেলাপি হবে সেটাকে আলাদা করা যায় কি না।
কিন্তু গভর্নর এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠান খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই যেন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম করা যায় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
এফবিসিসিআই নেতা ঋণের সুদহার সীমা তুলে না দেয়ারও দাবি জানান। বলেন, সুদহারের একক সীমা তুলে নিলে বিনিয়োগ আরও কমে যেতে পারে।
বর্তমানে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ আর ঋণের ৯ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আছে, আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি থাকতে হবে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে সাত শতাংশের বেশি। এই হিসাবে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।