ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই বোর্ডে লেনদেনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন সীমা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে এসএমইতে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার বেচাকেনা করতে হলে পুঁজিবাজারে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। এতদিন বিনিয়োগের সর্বনিম্ন এই সীমা ছিল ২০ লাখ টাকা।
কমিশনের ৮৩৩তম সভায় বুধাবর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে এসএমই বোর্ডে লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন কোয়ালিফাইড বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে সর্বনিম্ন বিনিয়োগসীমা ২০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে।
পুরোনো কোয়ালিফাইড বিনিয়োগকারীদের এসএমই বোর্ডের শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে আগামী তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকায় উন্নীত করতে হবে।
এসএমই বোর্ড চালুর পর লেনদেনের শর্ত আরও কঠিন ছিল। পুঁজিবাজারে কারও বিনিয়োগ কোটি টাকা থাকলেই তিনি এসএমই বোর্ডে লেনদেন করতে পারতেন। কিন্তু এসব নানা শর্তের বেড়াজালে লেনদেন একেবারেই তলানিতে নামতে থাকে।
ওটিসি মার্কেট থেকে আসা কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগ দর হারাতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও প্রায়ই অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যেতে দেখা যায়। অথচ কোম্পানিগুলোকে আগামী তিন বছরে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এই অবস্থায় বিনিয়োগের পরিমাণ প্রথম দফায় ১ কোটি থেকে কমিয়ে ৫০ লাখ করা হয়। এর পরও বাজারে গতি না আসায় সেটি কমিয়ে পরে করা হয় ২০ লাখ।
চলতি বছরের ২৮ মার্চ এসএমইতে লেনদেনের শর্ত আরও শিথিল করা হয়।
বিনিয়োগকারীদের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হওয়ার জন্য নিবন্ধন ডিএসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এতে বলা হয়, এই বাজারে লেনদেনের জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারী বাছাইয়ে ডিএসই নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রতি প্রান্তিকে একবার করবে। এ জন্য সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল এই কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরের তথ্য সরবরাহ করবে।
তার আগে পর্যন্ত এসএমইতে লেনদেন করার যোগ্য হওয়ার জন্য ডিএসইর ইএসএস ওয়েবসাইটে দেয়া অনলাইন ফরম পূরণ করে, তা ডিএসইতে মেইল করতে হতো। ডিএসই তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিত।
এসএমইতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো উদ্যোগ নিলেও তা খুব একটা ফলদায়ক হয়নি। এ ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বাধা ছিল নিবন্ধন প্রক্রিয়া। শুধু বিনিয়োগকারী না, বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউস কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে জানে না।
তবে ২৮ মার্চের পর কারও পোর্টফোলিওতে ২০ লাখ টাকার বিনিয়োগ (ক্রয়মূল্য বা বাজার দরের সর্বোচ্চটা বিবেচ্য) থাকলেই ডিএসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। এরপর এসএমইর শেয়ারে জোয়ার দেখা গেছে।
বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনি কোম্পানির জন্য ‘স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম’ নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। ওই বছরই প্রবর্তন করা হয় কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ রুলস-২০১৬। ২০১৮ সালে এর কিছু বিধির সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করে। এর আড়াই বছর পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু হয়।
ছয়টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হয় ডিএসইর এসএমই প্ল্যাটফর্মের লেনদেন। এই ছয় কোম্পানি হলো- বেঙ্গল বিস্কিুট, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং মিলস, মাস্টার ফিড এগ্রো, অরিজা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হিমাদ্রী লিমিটেড।
বর্তমানে সেখানে ১৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে।