বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজারের উত্থান টিকল না দুই দিনও

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২২ ১৬:১৭

আগের দুই কর্মদিবসে যতটুকু বেড়েছিল, তার চেয়ে আরও ১৫ পয়েন্ট বেশি সূচক পড়ল বুধবারেই। ফলে টানা ৯ কর্মদিবসের পর পুঁজিবাজারে যে উত্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিল সেটি দুই দিনের বেশি স্থায়ী হলো না।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেয়া বেশ কিছু পদক্ষেপে অনেকটা ইতিবাচক অবস্থায় ফিরেছিল লেনদেন। শেষ দুই কর্মদিবসে লেনেদেন ও সূচকের উত্থানে সেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।

কিন্তু আগের দুই কর্মদিবসে যতটুকু বেড়েছিল, তার চেয়ে আরও ১৫ পয়েন্ট বেশি সূচক পড়ল বুধবারেই। ফলে টানা ৯ কর্মদিবসের পর পুঁজিবাজারে যে উত্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিল সেটি দুই দিনের বেশি স্থায়ী হলো না।

৭৪ পয়েন্ট হ্রাসের মধ্য দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৮ পয়েন্টে। গত বছরের ২১ জুনের পর এটি সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। ওই দিন ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ৪২ পয়েন্টে।

দুই দিন পর ফিরে এলো ব্যাপক দরপতনের স্মৃতিও। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববারে ৩১৮টি কোম্পানির দর পতন হয়েছিল, ক্রেতা ছিল না বিপুলসংখ্যক শেয়ারের।

বুধবার দরপতনের তালিকায় যোগ হয়েছে আরও ২০টি কোম্পানি। এদিন ৩৩৮টি কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। যার বেশির ভাগেরই দিনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও এর আশপাশে।

বিপরীতে বেড়েছে মাত্র ১৭টি কোম্পানির শেয়ারদর। আর আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ২৫টি কোম্পানির শেয়ার।

লেনদেনের এই প্রভাবে প্রধান খাতগুলোর কয়েকটি এবং ছোট খাতের বেশির ভাগেই শতভাগ দরপতন হয়েছে। এগুলো হলো- ওষুধ ও রসায়ন, জ্বালানি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, আইটি, জীবন বিমা, সিরামিকস, ট্যানারি, কাগজ ও মুদ্রণ, সেবা ও আবাসন, ভ্রমণ ও অবকাশ এবং পাট খাত।

উল্লেখ করার মতো দর বৃদ্ধি হয়েছে বস্ত্র, বিমা এবং মিউচুয়াল ফান্ডের। বস্ত্র খাতে ১১, বিমা খাতে ৭ ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১১ শতাংশের বেশি কোম্পানির দর বৃদ্ধি দেখা গেছে।

অবশ্য এর চেয়ে কিছুটা বেশি দরপতন দেখা গিয়েছিল গত সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার। ওই দুই দিন সাড়ে তিন শর মতো করে কোম্পানির দর হারাতে দেখা যায়। ওই ‍দুই কর্মদিবসে বড় ধস তো বটেই, ওই সপ্তাহের পুরোটাই পতনে দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা।

তার আগের সপ্তাহের শেষ তিন কর্মদিবসেও ধারাবাহিক পতন হয় পুঁজিবাজারে।

পুঁজিবাজারের পতন যেন কাটছেই না ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই। ওই সময় আগুন লাগা পুঁজিবাজারে ঘি ঢালে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট। এ ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় মূল্যস্ফীতি, কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকা মান কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে উঠে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার।

গত সপ্তাহের আগের তিন কর্মদিবস পতনের পর নতুন সপ্তাহে ভালো দিন কাটবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকেই। তবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের এলাকাভেদে ১ ঘণ্টা বা প্রয়োজন বিশেষে ২ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা।

দেশের অর্থনীতি আরও বেশি মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে ধরে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। যার কারণে দেখা গেছে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা। ব্যাপক বিক্রির চাপে ধস নামে পুঁজিবাজারে।

সেটি অব্যাহত থাকে চলতি সপ্তাহের রোববারেও। এদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বিক্রির চাপ রোধে ডিলার অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর নজরদারির সিদ্ধান্ত রোববার থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

এই ঘোষণার পরের দুই দিন, অর্থাৎ সোম ও মঙ্গলবার যথাক্রমে ৩০ ও ২৯ পয়েন্ট করে মোট ৫৯ পয়েন্ট সূচক বাড়ে। লেনদেন বেড়ে ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়।

তবে দুই কর্মদিবস পরই সূচকের সঙ্গে কমল লেনদেনও। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৭৭৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫৯ কোটি ৬১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা কম। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৮৩৮ কোটি ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

লেনদেনের বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্মতা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক এখনও কাটেনি। এ ছাড়া গত দুই দিন যারা শেয়ার কিনেছিলেন তারা হয়তো কিছুটা লাভ পেয়েই শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ তারা আস্থা রাখতে পারেননি। এ জন্য ব্যাপক সেল প্রেসারের কারণে ট্রানজেকশন মোটামুটি হলেও ব্যাপক দর পতন হয়েছে।’

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ টাকা ৫০ পয়সায়।

ফান্ডটি আয়ের অনুপাতে প্রতি বছরই লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে কোনো দিনই শেয়ারপ্রতি এক টাকা আয় করতে পারেনি কোম্পানিটি। আর গত তিন বছরে শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা ছাড়াতে পারেনি। ৮ জুন থেকে দর পড়তে থাকা শেয়ারটির দর পর পর তিন কর্মদিবস বাড়ল।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ১০ শতাংশ দর বেড়েছে এনভয় টেক্সটাইলের। ৪২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৫ টাকা ২০ পয়সায়।

আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে কোম্পানির আয় কমেছে প্রায় তিনগুণ। তবে ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে কোম্পানিটি।

দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে মাটিন স্পিনিং। ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮০ টাকা ২০ পয়সায়।

২০২১ সালে কোম্পানির আয় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। আগের বছরের ২ টাকা ১৬ পয়সা শেয়ার প্রতি আয়ের বিপরীতে ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৩১ পয়সায়।

এ ছাড়া দর বৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড-১, স্কয়ার টেক্সটাইল, আলহাজ্ব টেক্সটাইল, কাট্টালি টেক্সটাইল, ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, দুলামিয়া কটন এবং ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান।

দর পতনের শীর্ষ ১০

দর পতনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে লোকসানি উসমানিয়া কটন। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানিটি প্রতি বছরই বড় অংকের লোকসান গুনছে।

দিনের সর্বোচ্চ সীমায় দর পতনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৩ টাকা ৫০ পয়সায়। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৭৫ টাকা।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলটেক্স টেক্সটাইলের দরও একই সমান কমেছে। প্রতিবছরেই লোকসান দেয়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৪ শতাংশ নগদ ও ৬ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল, এরপর আর লভ্যাংশের মুখ দেখেননি বিনিয়োগকারীরা।

তৃতীয় স্থানে থাকা রিং শাইন টেক্সটাইলের দর ২ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা থেকে ৯ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

এ ছাড়া ২ শতাংশ দর কমে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৯ টাকা ২০ পয়সায়।

খুব বেশি না হলেও আয় অনুপাতে প্রতিবছরই লভ্যাংশ দিয়ে এ ক্যাটাগরিতে শেয়ার লেনদেন করছে কোম্পানি।

দর পতনের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে মন্নু অ্যাগ্রো, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, লিবরা ইনফিউশনস ও রেনউইক যজ্ঞেশর।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট সূচক কমেছে ওয়ালটন হাইটেকের কারণে। এ দিন কোম্পানিটির দর কমেছে এক দশমিক ১২ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট কমিয়েছে রবি। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে এক দশমিক ৯৯ শতাংশ।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দর ১ দশমিক ০৩ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ৪ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট।

এ ছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেড, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, আইসিবি, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকন ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইউনাইটেড পাওয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ২৯ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট।

সূচক বাড়াল যারা

সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৬৯ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে এনভয় টেক্সটাইল। কোম্পানিটির দর ৬ দশমিক ১০ শতাংশ দর বেড়েছে।

স্কয়ার টেক্সটাইলের দর ২ দশমিক ৬২ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।

মাটিন স্পিনিং সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এ ছাড়া আলহাজ্ব টেক্সটাইল, ফনিক্স ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড, কাট্টালি টেক্সটাইল, এইচআর টেক্সটাইল, রহিম টেক্সটাইল, ইবিএল-এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২ দশমিক ০২ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর