বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজারে উত্থানে চাপ কাটার ইঙ্গিত

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২২ ১৫:৪৪

পুঁজিবাজারের চাপ কাটার ইঙ্গিত দিচ্ছে লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টিও। আগের দিনের চেয়ে ১৯৮ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৩৮ কোটি ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। যা গত ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

টানা ৯ কর্মদিবস ৩১৪ পয়েন্ট পতনের পরে দুই কর্মদিবসে সূচক প্রায় ৬০ পয়েন্ট উত্থান হয়েছে পুঁজিবাজারে। সেই সঙ্গে ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনে পুঁজিবাজারে চাপ কাটার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পর শুরু হওয়া পতন থেকে পুঁজিবাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রতিবেশী দেশ শ্রীরঙ্কার পরিস্থিতি আরও বেশি আতঙ্কিত করে তোলে বিনিয়োগকারীদের।

করোনাভাইরাস মহামারির পরে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমা, ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নেয়ার খবর স্থিতিশীল হতে দেয়নি পুঁজিবাজারকে।

আগের সপ্তাহের শেষ তিন কর্মদিবস পতনের পরে গত সপ্তাহের পুরোটাজুড়ে পুঁজিবাজারের পতন ডেকে আনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অঞ্চলভিত্তিক এক ঘণ্টা এবং তাতেও কুলাতে না পারলে দুই ঘণ্টার লোডশেডিং দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।

সরকারের এই সাশ্রয়ী নীতি বিনিয়োগকারীদের আরও ভাবিয়ে তোলে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতি কি আরও খারাপ দিকে যাচ্ছে- এমন শঙ্কায় সেল প্রেসার বাড়িয়ে দেন তারা। এতে করে গত সপ্তাহের ৫ কর্মদিবসেই পতন হয় পুঁজিবাজারে।

এর মধ্যে সোমবার ও মঙ্গলবার ধস নামে, সাড়ে তিন শতাধিক কোম্পানির দর পতন দেখা দেয়। ক্রেতা সংকটে ধুঁকতে থাকে পুঁজিবাজার।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার পতন রোধ না হলেও সেই অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আবারও ফিরে আসে বড় ধস।

এরই মধ্যে রোববার থেকে স্টক ডিলারদের বিনিয়োগের ওপর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। পুঁজিবাজারে ব্যাপক সেল প্রেসার বাড়িয়ে তারা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করছে কি-না তা খতিয়ে দেখার কথা জানায় সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

এই সিদ্ধান্তের পরের দিন সোমবার শুধু ৩০ পয়েন্ট উত্থানই নয়, তিন শ’র বেশি কোম্পানির দর পতনের ঘটনার থেকে বেরিয়ে দর বৃদ্ধি দেখা যায়। যেটি মঙ্গলবারেও অব্যাহত রইল।

এ দিন প্রায় সমান সংখ্যক কোম্পানির দরবৃদ্ধি ও দরপতন হয়েছে। তবে বড় মূলধনি কোম্পানিগুলের দরবৃদ্ধি সূচকে ৩০ পয়েন্ট যোগ করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ১১২ পয়েন্টে।

১৭৭টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৭২টি কোম্পানির শেয়ারদর। আর আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার।

পুঁজিবাজারের চাপ কাটার ইঙ্গিত দিচ্ছে লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়টিও। আগের দিনের চেয়ে ১৯৮ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৩৮ কোটি ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। যা গত ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আগে এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ৫ জুলাই। ওই দিন হাতবদল হয়েছিল ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা।

পুঁজিবাজারের লেনদেনের বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে চলমান আতঙ্ক পুরোপুরি কেটেছে বলা যাবে না। দীর্ঘ দিন পতনের কারণে শেয়ারগুলোর দর কমে গেছে। যার কারণে বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনেকেই কিছুটা শেয়ার ক্রয়ে ফিরেছেন। এ জন্যই বাজার কিছুটা ভালো গেছে।’

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের। দিনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ দর বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সামান্য পরিমাণে আয় বেড়েছে কোম্পানির। ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পরে ২০০৯ সাল থেকে বোনাস লভ্যাংশ দিতে শুরু করে কোম্পানি। আর ২০১৪ সাল থেকে নগদ ও বোনাস মিলিয়ে লভ্যাংশ পাচ্ছেন এর বিনিয়োগকারীরা।

৭ জুন থেকে শেয়ারটির দর কমছে। ওই দিন ৬৫ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি দুই কর্মদিবস বেড়ে মঙ্গলবার প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫১ টাকা ৭০ পয়সায়।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর বেড়েছে কাট্টালি টেক্সটাইলের। গত দুই বছর ধরে কোম্পানির আয় ব্যাপক হারে কমেছে।

২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত লভ্যাংশ দিলেও শেয়ারটির দর ওঠনামা করতে দেখা যায়। গত ফেব্রুয়ারিতেই ৪০ টাকার ওপরে লেনদেন হওয়া শেয়ারটির দর ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে সর্বশেষ হাতবদল হয়েছে ২৪ টাকা ৫০ পয়সায়।

তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ দর বেড়েছে ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। ফান্ডটি আয়ের অনুপাতে প্রতি বছরই লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে কোনো দিনই শেয়ারপ্রতি এক টাকা আয় করতে পারেনি কোম্পানি।

৮ জুন থেকে দর পড়তে থাকা শেয়ারটির দর পর পর দুই কর্মদিবস বাড়ল। মঙ্গলবার শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৮০ পয়সা।

এ ছাড়া দর বৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এসইএমল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ভ্যানগার্ড রূপালী ব্যাংক ব্যালান্স ফান্ড, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স এবং ফরচুন সুজ।

দর পতনের শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ২ শতাংশ দর কমেছে লোকসানি শ্যামপুর সুগার মিলসের।

প্রতি বছরই শেয়ারপ্রতি ১০০ টাকার বেশি লোকসান গুনতে হয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানটিকে। ফলে বিনিয়োগকারীদের কোনো দিনই লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

কোম্পানির শেয়ার ২ টাকা দর কমে সবশেষ লেনদেন হয়েছে ৯৮ টাকায়। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ১০০ টাকা।

এর পরেই দর কমেছে রেনউইক যজ্ঞেশরের। ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর কমে সর্বশেষ ৯৮০ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল এক হাজার ৭০ পয়সা।

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এই কোম্পানিও বড় অঙ্কের লোকসানে রয়েছে দুই বছর ধরে। যদিও তার আগের তিন বছর শেয়ার প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত আয় করেছে। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালে যথাক্রমে ৩২ টাকা ৩৫ পয়সা এবং ২৩ টাকা ৩২ পয়সা লোকসান গুনতে হয়েছে।

গত দুই বছর না দিলেও ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর কমেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের। আগের বছর শেয়ার প্রতি ৭ টাকা ৩৭ পয়সা লোকসান দেয়ার পরে ২০২১ সালেই ৪০ পয়সা মুনাফায় ফিরেছে কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

মঙ্গলবার ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর কমে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৫৮ টাকা ৯০ পয়সায়।

এ ছাড়া দর পতনের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে লোকসানি সাভার রিফ্যাক্টরিজ, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, এমএল ডায়িং, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড এবং লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড।

সূচক বাড়াল যারা

সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির দর ১ দশমিক ৭২ শতাংশ দর বেড়েছে।

ইউনাইটেড পাওয়ারের দর শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ০৯ পয়েন্ট।

ওয়ালটন হাইটেক লিমিটেড সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ।

এ ছাড়া ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বেক্সিমকো ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, ফরচুন সুজ, আইডিএলসি, আইসিবি এবং স্কয়ার টেক্সটাইল সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট সূচক কমেছে রবির কারণে। এ দিন কোম্পানিটির দর কমেছে এক দশমিক ৬৩ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট কমিয়েছে গ্রামীণফোন। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ।

তিতাস গ্যাসের দর ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ১ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।

এ আরএকে সিরামিকস, জিপিএইচ ইস্পাত, পাওয়ার গ্রিড, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ডোরিন পাওয়ার, শাহজিবাজার পাওয়ার এবং এসিআই লিমিটেডের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১১ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর