ডলার সংকট নিরসনে বিদেশে ব্যাংকগুলোর আটকে থাকা ডলার দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, ব্যাংকগুলো যদি এসব ডলার বিদেশ থেকে না নিয়ে আসে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক আর ডলার সাপোর্ট দেবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে এই মুহূর্তে আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। এখন পর্যন্ত মার্কেট স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ৭ বিলিয়ন ডলার সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। এখনো দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বিদেশে আটকে আছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর নস্ট্র অ্যাকাউন্টে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি পুনর্গঠন হিসাবে আটকে আছে। আটকে থাকা এসব ডলার দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সাপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটা দেশের আয়নার মতো মন্তব্য করে মুখপাত্র বলেন, ‘রিজার্ভ একেবারে কমিয়ে ফেলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেভাবে সহযোগিতা করবে ঠিক একইভাবে রপ্তানির টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা আমরা প্রত্যাশা করি।
‘ব্যাংকগুলোকে আরো গঠনমূলক আচরণ করতে হবে। নিয়মের মধ্যে থাকলে যে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেয়ার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যদি নিয়মের মধ্যে না থাকে তাহলে আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।’
ঋণ পুনঃতফসিলের মাস্টার্স সার্কুলার সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, ‘কোন গ্রাহককে পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়া হবে এবং কাকে দেয়া হবে না এটার পুরোপুরি দায়িত্ব এখন ব্যাংকের ওপর। এই দায়িত্ব এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক নেবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত পরিদর্শন করবে। পরিদর্শনে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে কোনোরকম ছাড় দেয়া হবে না।
‘ঋণ বিতরণের অনিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংক জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের ফলে এখন থেকে ঋণ বিতরণের সময় ব্যাংকের এমডি থেকে শাখা পর্যায়ের সবাই সতর্ক হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
ব্যাংকারদের দায়িত্ব আরও বাড়বে
ঋণ পুনঃতফসিল নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকারদের দায়িত্ব আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’র চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংস্কারের মাত্র শুরু। এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিল প্রক্রিয়া এখন থেকে আরও সুষ্ঠু হবে। পুনঃতফসিলের নতুন নীতিমালা আগের পদ্ধতির চেয়ে অনেক ভালো। কারণ এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণের পুরো দায়দায়িত্ব বর্তাবে ব্যাংকের ওপর।’
ব্যাংকার্স সভায় আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেন বৃদ্ধি, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো এবং রপ্তানি বিল দ্রুত দেশে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডলার সংকট নিয়ে ফের বৈঠক হবে
ডলারের সংকট নিয়ে আবারও বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবিবি চেয়ারম্যান জানান, ডলার মার্কেট স্থিতিশীল করতে এবিবি ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে আবারও বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বৈঠকটি কখন অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ধারণ হয়নি।