বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রবাসী আয়ের পালে জোর হাওয়া, নতুন রেকর্ডের আশা

  •    
  • ২৫ জুলাই, ২০২২ ১৮:৫৯

অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার এসেছিল; গড়ে প্রতিদিন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার কোটির কিছু বেশি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে যখন নানান হতাশার তথ্য, তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের বিস্ময়কর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। চলতি জুলাইয়ের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এই অর্থবছরে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত হবে দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ২৪ দিনে ১৭৩ কোটি ৯০ লাখ (১.৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা।

এই অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল; গড়ে প্রতিদিন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার কোটির কিছু বেশি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২০-২১ অর্থবছরে। সে সময় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯০ হাজার ডলারের কিছু বেশি প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছে।

এসব হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে র‌েমিট্যান্সে রয়েছে ঊর্ধ্বগতি। এই প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকলে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ে; ঈদের পর কমে যায়। তবে এবার কোরবানির ঈদের আগে যে গতিতে রেমিট্যান্স এসেছে, সেই ধারা ঈদের পরেও অব্যাহত আছে।

দেশে গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নামে। ঈদের ছুটির আগে সাত দিনেই ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ছুটির পর তিন দিনে (১২ থেকে ১৪ জুলাই) পাঠিয়েছেন ৩৩ কোটি ডলার। ১৫ ও ১৬ জুলাই ছিল সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। এরপর ১৭ থেকে ২১ জুলাই পাঁচ দিনে এসেছে ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ডলার।

সব মিলিয়ে জুলাইয়ের ২১ দিনে (১ থেকে ২১ জুলাই) ১৬৪ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

মাসের বাকি ৭ দিনে এই গতিতে রেমিট্যান্স এলে জুলাই শেষে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫০ কোটি (২.৫০ বিলিয়ন) ডলারের কাছাকাছি হতে পারে।

ঈদের পরেও কেন রেমিট্যান্স বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।’

তিনি বলেন, ‘এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’

সোমবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। তবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১০০ টাকার বেশি দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে।

সে হিসাবে কোনো প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ ডলার দেশে পাঠালে ১০০ টাকার সঙ্গে নগদ প্রণোদনার ২ টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে ১০২ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন।

কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারের ডলারের দরও একই। সে কারণেই প্রবাসীরা এখন অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে দেশে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।

রেমিট্যান্স বাড়ার আরেকটি কারণের কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত অর্থবছরে ছয় লাখের বেশি নতুন কর্মী বিদেশে গেছেন। তারা কাজ শুরু করেছেন। দেশে টাকা পাঠাতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখানে কর্মরত আমাদের প্রবাসীরা বেশি আয় করছেন। দেশেও বেশি টাকা পাঠাতে পারছেন।

‘দেশে ডলারের সংকট চলছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। রিজার্ভ কমছে। এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালচাল নিয়ে তৈরি করা পাক্ষিক প্রতিবেদনেও রেমিট্যান্স নিয়ে সুসংবাদের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ২১ জুলাই প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সব প্রবাসী তাদের কর্মস্থলে ফিরেছেন। টাকার বিপরীতে ডলার বেশ খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।

‘এই বিষয়গুলো আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স বাড়াতে সাহায্য করবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আসবে।

এ বিভাগের আরো খবর