বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দীর্ঘ অপেক্ষার পর আলো ঝলমলে দিন পুঁজিবাজারে

  •    
  • ২৫ জুলাই, ২০২২ ১৫:৪৩

পুঁজিবাজারের অস্থিরতা রোধে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলার অ্যাকাউন্টের বিনিয়োগের ওপর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এসব অ্যাকাউন্টের টাকা কোথায়, কী পরিমাণ বিনিয়োগ করা আছে, তা রোববার থেকে পর্যবেক্ষণের কথা জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এর পরদিন বাজারে উত্থান দেখা যায় সূচকে।

এক, দুই করে টানা ৯ দিন পতন তো বটেই, বেশ কয়েক দিন ধস নামার পর সোমবার আলো ঝলমলে দিন দেখলেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। লম্বা সময় পরে দরপতনের বিপরীতে দরবৃদ্ধির সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে। বেড়েছে লেনদেনও।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের খবর টালমাটাল পুঁজিবাজারকে স্থির হতে দেয়নি। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ঘোষিত সরকারের সাশ্রয়ী নীতি আরও বেশি পতনের দিকে ঠেলে দেয় পুঁজিবাজারকে।

ওই সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবস, তার আগের সপ্তাহের তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন মিলিয়ে ৯ কর্মদিবসে সূচক পড়ে ৩১৪ পয়েন্ট।

এর মধ্যে গত সোম ও মঙ্গলবার ব্যাপক ধস নামে। লেনদেন নেমে যায় ৩০০ কোটির ঘরে। পরের দুই কর্মদিবসে পতন রোধ না হলেও ধস থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যায়।

বড় ধরনের সংশোধনের পর নতুন সপ্তাহে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, এমন প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, তবে রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আবারও ধস নামে। ৭৪ পয়েন্ট হ্রাসের মধ্য দিয়ে সূচক ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়।

পুঁজিবাজারে পতন অব্যাহত থাকার কারণ হিসেবে বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয় থাকার ব্যাপারটিকে দায়ী করে আসছিলেন বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়টি আমলে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। পুঁজিবাজারের অস্থিরতা রোধে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলার অ্যাকাউন্টের বিনিয়োগের ওপর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এসব অ্যাকাউন্টের টাকা কোথায়, কী পরিমাণ বিনিয়োগ করা আছে, তা রোববার থেকে পর্যবেক্ষণের কথা জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ডিলার অ্যাকাউন্টের টাকাগুলো আমাদের খোঁজ নিতে হচ্ছে যে, এরা কোথায় বিনিয়োগ করে বসে আছে।’

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় দেখি তারা মাঝে মাঝে ইনঅ্যাক্টিভ (নিষ্ক্রিয়) থাকে। এ জন্য দেখছি যে, তারা ক্যাপিটাল মার্কেট না অন্য মার্কেটে বিনিয়োগ করছে। এটাই আমরা একটু ওয়াচ করব।’

এই সিদ্ধান্তের পরে সোমবার বাজারে ক্রয় প্রবণতা দেখা গেছে, তবে লেনদেনের শুরুটাও হয়েছিল পতনের ধারাতেই। এক ঘণ্টার মধ্যেই সূচক আরও কমে ৬ হাজারের নিচে চলে যায়। বেলা ১০টা ৫০ মিনিটে সূচকের অবস্থান সর্বনিম্ন হয়। আগের দিনের চেয়ে ৬৮ পয়েন্ট কমে সূচক দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯৮৪ পয়েন্টে।

পরে দর‍বৃদ্ধিতে আতঙ্কের মেঘ কাটতে শুরু করে। দুপুর ১২টা ১৯ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট বেড়ে আবার কিছুটা পড়তে দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত লেনদেন শেষ হয় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স স্থির হয় ৬ হাজার ৮২ পয়েন্টে।

দরবৃদ্ধির বাতাস লাগে লেনদেনেও। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ৬৭৬ কোটি ৯৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। রোববার ২০৫ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা কমে লেনদেন দাঁড়ায় ৪৭০ কোটি ৯৭ লাখ ৭১ হাজার টাকায়।

এর বিপরীতে সোমবার দিনভর হাতবদল হয় ৬৩৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা বেশি।

গত সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবারের মতোই চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনে তিন শর বেশি কোম্পানির দরপতন হয়েছিল। এর বেশিরভাগেরই দরপতন হয় দিনের সর্বোচ্চ সীমায়। ক্রেতা ছিল না বিপুলসংখ্যক শেয়ারের।

এ চিত্র বদলে দীর্ঘদিন পর সোমবার দরপতনের তুলনায় বেশি হয়েছে দরবৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারের সংখ্যা।

১৩১টি কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৯৬টির দাম। এ ছাড়া আগের দরেই লেনদেন হয় ৫৩টি কোম্পানির শেয়ার।

আগের দিন ঢালাও দরপতনের কারণে কোনো খাতেই দরবৃদ্ধি দেখা যায়নি। শতভাগ দরপতন হয়েছিল বেশ কয়েকটি খাতে, যেটি আজ ঘটতে দেখা যায়নি।

দরবৃদ্ধি দেখা গেছে প্রধান খাতগুলোর কয়েকটিতে। এর মধ্যে বস্ত্র খাতে ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, বিবিধে ৫০ শতাংশ, প্রকৌশলে ৬৯ দশমিক ০৫ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়নে ৭০ দশমিক ৯৭ শতাংশ কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে।

লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরু থেকেই বলছি, আতঙ্কের কারণে বাজার পড়ছে। বড় বিনিয়োগকারীরাও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন।

‘কয়েক দিন পড়ার কারণে বাজার একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে। এখন বড় বিনিয়োগকারীরা অ্যাক্টিভিটি শুরু করবেন। আজ সেটার কিছুটা হয়েছে, যার জন্য বাজার কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।’

দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে জাহিন স্পিনিংয়ের। ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ দর বেড়ে ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে প্রতি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩ টাকা ৪০ পয়সায়।

২০২০ সাল থেকে লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি। যদিও ২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় লোকসানের পরিমাণ কমেছে। তবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো দিনই নগদ লভ্যাংশ দেয়নি জাহিন স্পিনিং।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর বেড়েছে মাটিন স্পিনিংয়ের। ১৯ জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে দর বাড়ছে কোম্পানির শেয়ারের। ওই দিন ৬৮ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হলেও সোমবার ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে ৭৯ টাকা ৩০ পয়সায় শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে।

দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে মন্নু ফেব্রিক্স। লোকসান কাটিয়ে উঠতে শুরু করলেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার ইতিহাস ভালো নয় কোম্পানিটির। তারপরও এ দিন কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৪ টাকা ৯০ পয়সায়।

এ ছাড়া দর বৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ, সাফকো স্পিনিং, দুলামিয়া কটন, মেট্রো স্পিনিং, আর্গন ডেনিমস এবং অ্যাপোলো ইস্পাত।

দর পতনের শীর্ষ ১০

সোমবার পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি ২ শতাংশ দর কমেছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের। মুনাফায় থেকে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিলেও কোম্পানির শেয়ারের দর কমছে গত ৭ জুন থেকে।

ওই দিন ৫৮ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল প্রতিটি শেয়ার। এরপর দর ওঠানামার মধ্য দিয়ে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৪৯ টাকায়। আগের দুই কর্মদিবস অবশ্য দর বেড়েছিল কোম্পানিটির।

একই সমান দর কমেছে পরের অবস্থানে থাকা প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের কোনো বছর নগদ লভ্যাংশ দিয়ে পারেনি কোম্পানি।

আগের কর্মদিবস দর বাড়ার পরে ২ শতাংশ বা ১ টাকা ৬০ পয়সা কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৮ টাকা ৪০ পয়সায়।

দর হারানোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে নিউ লাইন ক্লোথিংস লিমিটেড। এক দিন বাড়ার পর দুই কর্মদিবস দর কমল শেয়ারটির। সোমবার ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে শেয়ারটির দাম দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ৪০ পয়সায়।

তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, ইমাম বাটন, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ক্যাবলস ও শ্যামপুর সুগার মিলস।

সূচক বাড়াল যারা

সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ২৫ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বিকন ফার্মা। কোম্পানিটির দর ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ দর বেড়েছে।

ওয়ালটন হাইটেকের দর শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৮২ পয়েন্ট।

বেক্সিমকো লিমিটেড সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

এ ছাড়া বার্জার পেইন্টস, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক, আরএকে সিরামিকস, পূবালী ব্যাংক, মাটিন স্পিনিং এবং বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২২ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট সূচক কমেছে রবির কারণে। এ দিন কোম্পানিটির দর কমেছে এক দশমিক ৯২ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ০১ পয়েন্ট কমিয়েছে গ্রামীণফোন। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ।

আইসিবির দর ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট।

এ ছাড়া সামিট পাওয়ার, আইপিডিসি, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইবিএল, আল আরাফাহ ব্যাংক, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ফরচুন সুজের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১৪ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর