বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অর্থনীতিতে অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে’

  •    
  • ২৪ জুলাই, ২০২২ ১৮:০৬

সিপিডি আয়োজিত সেমিনারে অর্থনীতিবিদরা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এখন লৌহ ত্রিভূজ গেড়ে বসেছে। মুষ্টিময় লোক সুবিধা পাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি বেশ কিছু ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন।

দেশের অর্থনীতি সংকটে রয়েছে। তবে এ মুহূর্তের সংকট শুধু সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা নয়। অর্থনীতিতে একটা অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। স্বার্থের দ্বন্দ্ব এখন অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হিসেবে কাজ করছে। এর শিকার হচ্ছে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা রোববার এক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত এই সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এখন লৌহ ত্রিভূজ গেড়ে বসেছে। মুষ্টিময় লোক সুবিধা পাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি বেশ কিছু ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে তিনটি অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, নতুন নতুন দারিদ্র্য; দ্বিতীয়ত, পুষ্টি ও মাধ্যমিক শিক্ষাসহ কিছু সূচকে নিম্নমুখিতা এবং তৃতীয়ত, যুব বেকারত্ব বৃদ্ধি।

তারা বলেন, কোভিড মহামারির পর দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হলেও তিন কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে ২১ লাখ লোক দরিদ্র হয়েছে। নতুন এই দারিদ্র্য অবিচারের একটা দিক বলে মনে করেন তারা।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, দেশ কিছু উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন, পুষ্টিতে আমরা ভালো করছিলাম। এখন পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। মাধ্যমিক শিক্ষায় ড্রপ আউট বেড়েছে।

এগুলো অবিচারের দ্বিতীয় চেহারা। যে ধরনের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে আমরা এগোচ্ছি তাতে যুব বেকারত্ব বাড়ছে। এসব কারণে কোভিডের পর অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট কিছু অবিচারের চেহারা দেখা যাচ্ছে।

সেমিনারে সামষ্টিক অর্থনীতি, জ্বালানি পণ্য, ব্যাংক খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন।

বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, আরেক উপদেষ্টা ও গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার বা পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক মু. তামিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কোভিড-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হলেও নতুন করে তিন কোটি লোক দারিদ্র্যসীমায় যুক্ত হয়েছে। গ্রাম ও শহরের মানুষের আয় কমেছে। অর্থনীতিতে এক ধরনের অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন দারিদ্র্য এই অবিচারের একটি।

‘কিছু উন্নয়ন সূচক যেমন পুষ্টি ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হবে। এছাড়া যুব বেকারত্ব বাড়ছে। আর এই তিনটি মিলে অর্থনীতিতে অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এখন লোহ ত্রিভূজ গেড়ে বসেছে। প্রথমত, আমাদের উন্নয়ন-দর্শন এখন একমাত্রিক দর্শনে আটকে গেছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনীতি এখন স্বার্থের দ্বন্দ্ব-নির্ভর। প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়মই নিয়ম হয়েছে। ফলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এখন হার্ট অফ ইকনোমি বা অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

প্রশ্ন তুলে হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুরু হয়েছিল স্বল্প সময়ের জন্য। তাহলে এখন কেন সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে? এর কোনো অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা নেই। তাহলে কার স্বার্থে এ সুবিধা? এখানে কনফ্লিকট অফ ইন্টারেস্ট কাজ করেছে।

‘ট্রান্সপোর্ট সেক্টর বা পরিবহন খাতও স্বার্থের দ্বন্দ্ব-নির্ভর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি, ব্যাংক খাত, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে।

‘একটা সময়ে আমরা দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তা বা রিজেলিয়ান্স নিয়ে গর্ব করতাম। এখন এটাকে বিদায় দেয়ার সময় এসেছে। কারণ এমন একটা সময় এসেছে যখন সব সুখ সুবিধাবীদরা ভোগ করছে। অবিচারের শিকার এখন দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

ব্যবসায়ী নেতা মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘আমরা অস্বস্তিতে আছি। এর মূল কারণ গ্যাস সংকট। এই সংকটের সমাধান না হলে রপ্তানিমুখী শিল্প সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং রপ্তানি কমে যাবে। এর ফলে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হবে।’

অধ্যাপক মু. তামীম বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ মূল সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এগুলো বসে থাকায় ক্ষতি হচ্ছে। সম্পূর্ণ বসে আছে এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া ঠিক নয়।

‘বিদ্যুৎ খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সাশ্রয় করা ছাড়া আমাদের এখন আর কোনো উপায় নেই।

বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন তিনি। একইসঙ্গে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর