খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন চুক্তি স্বাক্ষরের পর দেশের বাজারে গম ও আটা-ময়দার দাম স্থিতিশীল। বরং পাইকারি পর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, খুচরা পর্যায়েও দ্রুতই দাম কমতে শুরু করবে।
কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানিতে শুক্রবার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন। তুরস্কের ইস্তানবুলে হয় এ চুক্তি। এর প্রভাবে বাজারে গম ও গমজাত খাদ্যপণ্যের দামে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজারে শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়তে থাকা আটা-ময়দার দাম এখন স্থির। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হলে চাল, ভোজ্যতেল এবং সার আমদানিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবলু বলেন, এখানে প্রতি কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা ২০ পয়সা। আর খোলা আটার কেজি ৩৮ টাকা। নতুন করে দাম বাড়েনি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম কিছুটা কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির কারণে দুই-একদিনের মধ্যে দাম কমবে।
আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। দেশেও পাইকারি পর্যায়ে দাম কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দুই-একটি ব্র্যান্ডের আটা-ময়দার দামও কমেছে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটার দাম ২১শ’ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭শ’ টাকা।
দেশে গম আমদানির অন্যতম উৎস রাশিয়া ও ইউক্রেন। সবশেষ ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধের পর স্থানীয় বাজারে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম।
রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাব বলছে, এক বছরে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৫৬ ভাগ। গেল এক সপ্তাহেও বেড়েছে এই দুই পণ্যের দাম।
রাজধানীর মৌলভীবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে আটা-ময়দার দাম কিছুটা কমেছে। তবে এর প্রভাব খুচরা পর্যায়ে যেতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে দাম কমলে বেশি দামের পণ্য কেউ ধরে রাখতে চাইবে না। সে সুবাদে বাজারে সরবরাহ বাড়বে, দামও কমবে।
দেশে গমের বার্ষিক চাহিদা ৭৫ লাখ টনের বেশি। এর বড় অংশই আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে গত অর্থবছরে দেশে আসে মাত্র ৪০ লাখ টন গম। রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববাজারে গমের পাশাপাশি সারসহ আরো কিছু পণ্যের দাম কমে আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মাছ ও মুরগির দাম ঊর্ধ্বমুখী
বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ ও পোল্ট্রি মুরগি। রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সাধারণত এ মৌসুমে ব্রয়লারের দাম থাকে ১২০ টাকা কেজির আশপাশে। বর্তমানে তার চেয়ে অন্তত ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালী জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩শ’।
অন্যদিকে ফার্মের লাল ডিমের ডজন এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দাম আরো বেশি।
মাছের দামেও আগুন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আড়তে বিপুল পরিমাণ মাছ বেচাকেনা হলেও সে অনুপাতে বাজারে সরবরাহ নেই। মাছ নিয়েও কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছে অসাধু চক্র।
সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকার প্রভাব মাছের বাজারে। প্রায় প্রতিটি মাছের দামে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
ভরা মৌসুমে বড় আকারের ইলিশের কেজি কমপক্ষে ১৫শ’ টাকা। মাঝারি আকারের ইলিশের দামও হাজার টাকার কাছাকাছি। ফলে রুই, কাতলা ও মৃগেলের মতো মাছের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। ওপর বাড়তি চাপ তৈরী হয়েছে। ছোট মাছের দামও চড়া।
স্বস্তির খবর, আজ শনিবার মধ্যরাতেই মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রস্তুত হয়ে আছে জেলেরা। আশা করা যায়, মাছের বাজারে দ্রুতই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এদিকে স্বস্তি নেই কাঁচামরিচ ও টমেটোর দাম নিয়েও। কাঁচামরিচের কেজি ২০০ টাকার উপরে। টমেটো ও গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
কোরবানির ঈদের পর থেকেই সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। করলা, পটল, মূলা, চিচিঙ্গা, লম্বা বেগুনের কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।