বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাত বছর পর অডিটর এনলিস্টমেন্ট বিধিমালা জারি

  •    
  • ২২ জুলাই, ২০২২ ২১:০৮

২০১৫ সালে বহুল আলোচিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করা হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে গঠিত হয় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল। এবার ২১টি বিধি-প্রবিধি নিয়ে অডিটর এনলিস্টমেন্ট বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হলো।

‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট’ প্রণয়নের প্রায় সাত বছর পর অডিটর এনলিস্টমেন্ট বিধিমালা জারি করা হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন, ২০১৫-এর ১৬ নং আইনের ধারা ৭০ অনুযায়ী গত ১৪ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ।

এতে স্বাক্ষর করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৫ সালে বহুল আলোচিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করা হয়। এতে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), কোম্পানি ও সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর আর্থিক হিসাবের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)’ প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়।

আইনটি বাস্তবায়নে পরের বছর ২০১৬ সালের এপ্রিলে গঠিত হয় এফআরসি। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র-সচিব সি কিউ কে মুস্তাক আহমদকে এফআরসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থার কার্যক্রম শুরু হয়।

মুস্তাক আহমেদের মেয়াদ ২০২০ সালের ৮ জুলাই শেষ হওয়ার পরে অর্থবিভাগের সচিব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম-এর অধ্যাপক ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়াকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। তার নেতৃত্বেই দীর্ঘ সময় পরে ২১টি বিধি-প্রবিধি নিয়ে অডিটর এনলিস্টমেন্ট বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হলো।

এ বিষয়ে এফআরসি চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্ডিন্যান্স হয়েছে ২০০৮ সালে। আর ২০১৫ সালে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট হয়েছে। এই আইনে প্রায় ২১টি বিধি-প্রবিধি তৈরি করতে হবে। আমি জয়েন করার পর এ কাজে হাত দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটা গেজেট হয়েছে। সেটা হলো অডিটর এনলিস্টমেন্ট বিধিমালা। আইনে বলা আছে, সমস্ত অডিটর যদি এফআরসিতে এনলিস্টেড না হন, তাহলে তারা কোনো অডিট ফাংশন করতে পারবেন না।

‘তবে আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি প্রত্যেকে আলাদা আলাদা অডিটরের প্যানেল তৈরি করে ব্যাংক, লিস্টেড কোম্পানি এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের জন্য অডিট করায়।

‘কিন্তু আইনে যেটা বলা হয়েছে, অন্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, এই আইন পাস হওয়ার পরে সমস্ত অডিটর এনলিস্টেড হবেন ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি)।

‘এটা আবার বিধি দ্বারা নির্ধারিত করতে হবে। আমরা এই বিধিতে হাত দেই। এই বিধিটাই গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।’

দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি কার্যকর হবে উল্লেখ করে গেজেটে বলা হয়েছে, এটি ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা ফার্ম তালিকাভুক্তি) বিধিমালা, ২০২২’ নামে অভিহিত হবে।

২ নং বিধিতে এই আইন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, তালিকভুক্তি সনদ, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, প্রয়োগকারী বিভাগ, ফরম, ব্যক্তি, বিশেষ নিরীক্ষক বা নিরীক্ষা ফার্ম ইত্যাদির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

৩ নং বিধিতে রয়েছে তালিকাভুক্তির আবেদন প্রক্রিয়া। এতে বলা হয়েছে, আইনের ধারা ৩১ এর উদ্দেশ্যে পূরণে এই বিধিমালা কার্যকর হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিল কর্তৃক বিভিন্ন সময় জারিকৃত ও প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে তালিকাভুক্তির জন্য কোনো নিরীক্ষক বা নিরীক্ষা ফার্ম আবেদন করতে পারবে।

কাউন্সিল বরাবর লিখিত ও অনলাইনে আবেদন দাখিল করা যাবে। তবে তাদেরকে অবশ্যই আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন এবং কস্ট নিরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে।

তালিকাভুক্তির আবেদন দাখিলের সময় আবেদনকারীকে বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণাদি দাখিল করতে হবে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিরীক্ষকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পেশাদার অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠানের সদস্য সনদ বা পেশাদারী অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ বা সংশ্লিষ্ট পেশাদার অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সনদের প্রত্যয়নপত্রে অনুলিপি সংযুক্ত করতে হবে।

এ ছাড়াও কর সনাক্তকরণ নম্বর ও আয়কর প্রদানের হালনাগাদ প্রত্যয়নপত্র, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পেশাদার অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠানের ইস্যুকৃত হালনাগাদ নিরীক্ষা চর্চা সনদের অনুলিপি, তফসিল-৩ এ নির্ধারিত ফি জমার রশিদ, নিরীক্ষকের ২ কপি ছবি এবং নিরীক্ষকের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের অনুলিপি প্রদান করতে হবে।

আর নিরীক্ষা ফার্মের ক্ষেত্রে হালনাগাদ ফার্ম প্রোফাইল, ফার্মের শাখা অফিসের সংখ্যা, শাখার নাম, ঠিকানা, ই-মেইল, মোবাইল বা ফোন নম্বর এবং অংশীদারগণের বিস্তারিত বিবরণ জানাতে হবে।

এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পেশাদার অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠানের ইস্যুকৃত হালনাগাদ নিরীক্ষা ফার্মের মালিক বা অংশীদারের নামে নিরীক্ষা চর্চা সনদের অনুলিপি, অংশীদারি চুক্তি বা লিখিত চুক্তিপত্রের অনুলিপি, ট্রেড লাইসেন্সের কপি, তফসিল-৩ এ নির্ধারিত ফি জমার রশিদ, প্রত্যেক অংশীদারের দুই কপি রঙিন ছবি, তাদের নাম, ঠিকানা, পদবি, নিরীক্ষা চর্চা সনদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি, ফার্ম রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মে নিবন্ধিত হলে নিবন্ধন সনদের অনুলিপি, ফার্ম ও অংশীদারদের আয়কর প্রদানের হালনাগাদ প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।

এর বাইরে কাউন্সিল প্রয়োজন মনে করলে আরও আটটি অতিরিক্ত তথ্যের জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

আইন ও বিধিমালা সাপেক্ষে নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা ফার্মের তালিকাভুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর।

প্রত্যেক নিরীক্ষক এবং ফার্মকে তালিকাভুক্তির আবেদনের সঙ্গে কাউন্সিলের অনুকূলে পে-অর্ডার বা ক্রস চেকের মাধ্যমে বা ব্যাংকের হিসাবে তফসিল-৩ এ উল্লিখিত তালিকাভুক্তির ফি পরিশোধ করতে হবে।

ব্যক্তি নিরীক্ষক হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে কোনো ফার্মের অংশীদার হলে পুনরায় সংশ্লিষ্ট বছরের বার্ষিক তালিকাভুক্তি ফি পরিশোধ করতে হবে না।

তালিকা বহির্ভূত অংশীদার অর্থাৎ যারা পেশাদার অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠানের সদস্য কিন্তু নিরীক্ষা চর্চা সনদপত্রপ্রাপ্ত নন, তাদের ক্ষেত্রে নিরীক্ষকদের মতো একই ফি প্রযোজ্য হবে।

ফার্মের একাধিক শাখার জন্য অতিরিক্ত ফি, বিলম্বিত তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিলম্ব ফি প্রদান করতে হবে।

অর্থ বছর (জুলাই-জুন) অনুযায়ী ফি সংক্রান্ত বিষয়ে বছর গণনা করা হবে। বছরের যে কোনো সময় নিরীক্ষক বা নিরীক্ষা ফার্ম তালিকাভুক্ত বা নবায়ন করা হলে তা সংশ্লিষ্ট বছরের ফি হিসেবে গণ্য করা হবে।

তালিকাভুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়নের আবেদন করতে হবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এতে বলা হয়, তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে এক বছর পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে সংশ্লিষ্ট পেশাদার অ্যাকাউন্টেসির হালনাগাদ নিরীক্ষা চর্চা সনদের অনুলিপি কাউন্সিল বরাবর জমাদানের মাধ্যমে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে।

এ ছাড়াও নবায়ন সম্পর্কিত আরও ছয়টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এফআরসি-তে তালিকাভুক্তির যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। পেশাদার অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে হবে। হালনাগাদ নিরীক্ষা চর্চা সনদ থাকতে হবে।

কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি আবেদনের যোগ্য হবেন না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম হতে হবে।

নিরীক্ষকরা কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা ফার্ম ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকতে পারবেন না বা জনস্বার্থ সংস্থায় চাকরিরত থাকতে পারবেন না বা স্বাধীনভাবে নিরীক্ষা করতে পারবেন না বা নিরীক্ষা সেবা প্রদান কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে পারবেন না।

নিরীক্ষকরা কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া ছয় মাসের বেশি বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করতে পারবেন না এবং নিরীক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে পারবেন না। বিদেশি নাগরিক বা বিদেশে স্থায়ী নিবাসী, পলাতক, দেউলিয়া, ঋণখেলাপী বা দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত কেউ সংস্থার অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন না।

মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, আন্তর্জাতিক অপরাধ বা গণহত্যা, ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত অথবা দালাল আইনে অভিযুক্ত বা দণ্ডপ্রাপ্তরাও অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

এ বিভাগের আরো খবর