বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়া উচিত: দেবপ্রিয়

  •    
  • ২১ জুলাই, ২০২২ ১৭:০৬

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী যদিও এ মুহূর্তে টাকা না নেয়ার কথা বলেছেন, কিন্তু আমি মনে করি, চলতি লেনদেনের ভারসাম্য (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) রক্ষার জন্য আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়া উচিত বাংলাদেশের।’

বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে স্বস্তিদায়ক অবস্থানে থাকলেও ২০২৪ সালের পর দায়দেনার চাপ বাড়বে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ বা সিপিডি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেয়ার কথা বলেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার ২০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর আমরা অনেকটাই স্বস্তির জায়গায় ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। রাজস্ব আয় প্রত্যাশিতভাবে হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার অভাব আছে। ঘাটতি আছে প্রকল্প বাস্তবায়নে।

এসব কারণে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ওইসব প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ফলে বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়বে।

এ জন্য সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে সিপিডি বলেছে, এখন থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন, কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। তা না হলে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, যেসব উৎস থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেভাবে বাংলাদেশের দায়দেনা বাড়ছে এবং ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে, তা আগামী দুই বছর পর বাংলাদেশের জন্য আর্থিক খাতে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে দায়দেনা পরিশোধে পুনঃতফসিল করা যেতে পারে। যদি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দরকার হয়, সেটিও করা যেতে পারে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার কথা বলেছে সিপিডি।

ড. দেবপ্রিয় মনে করেন, মেগা প্রকল্প যতই যৌক্তিক হোক না কেন, তার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতকে উপেক্ষা করা চলবে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়িয়ে এসব খাতে বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।

ভার্চুয়াল আলাপচারিতায় মেগা প্রকল্পগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেন ড. দেবপ্রিয় এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

সিপিডির তথ্য অনুযায়ী, ২০ মেগা প্রকল্পে এ পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৭০ বিলিয়ন ডলার। এর দুই-তৃতীয়াংশই বিদেশি ঋণ। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগ ভৌত অবকাঠামো। এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৫০ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতে হয়েছে ৩৫ শতাংশ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ১২ শতাংশ।

সিপিডি বলেছে, ২০১০ সাল থেকে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলেও সবচেয়ে বেশি প্রকল্প এসেছে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল সময়ে।

২০ প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি এসেছে এই সময়। তবে দুই-তিনটি প্রকল্প ছাড়া বাকিগুলোর বাস্তবায়ন ভালো নয়। বিশেষ করে ২০১৮ সালের পর যে সমস্ত প্রকল্প এসেছে সেগুলোর বাস্তবায়ন নগণ্য।

ড. দেবপ্রিয় জানান, আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নে কাজ শেষ হওয়ার কথা। যেভাবে কাজ এগোচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আরও সময় নেবে।

তবে দেবপ্রিয় মনে করেন, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহ করা হয়েছে, এগুলো ভালো। কারণ, ঋণের সুদের হার কম ও পরিশোধের সময়ও লম্বা। ফলে ঋণ পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ কম পড়বে।

ড. দেবপ্রিয়র মতে, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য আছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক যুক্তিও রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় বলে, যদি মানসম্মত সমীক্ষা না থাকে, সমন্বয়ের অভাব থাকে, বাস্তবায়নের ঘাটতি থাকে, কাজ শেষ হতে সময় বেশি লাগে, দুর্নীতি হয়, সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল থাকে, তাহলে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল আসে না। বহু দেশে অনেক মেগা প্রকল্প বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সুতরাং বাংলাদেশে এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় জানান, এসব সমস্যার সমাধানে অনেক দেশ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের কাছে গেছে। বাংলাদেশও আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এটা ইতিবাচক দিক।

তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী যদিও এ মুহূর্তে টাকা না নেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, চলতি লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়া উচিত বাংলাদেশের। কারণ আমাদের সমস্যা কোনো মৌসুমি সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে কাঠামোগত।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আগামীতে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না, সেটা নির্ভর করছে তখন ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের অবস্থা কী দাঁড়াবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কেমন থাকবে, রপ্তানি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে– এসব বিষয়ের ওপর।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আইএমএফের কাছে শুধু টাকা চাওয়ার জন্য যাওয়া হয় না। তারা নীতি সংস্কার নিয়ে কথা বলে। আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মধ্যমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আইএমএফের কাছ থেকে টাকা নেয়া উচিত।’

এ বিভাগের আরো খবর