দেশে মূল্যস্ফীতির হার গত ৯ বছরের সর্বোচ্চ জানিয়ে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস যে তথ্য প্রকাশ করেছে. তা মানতে চাইছেন না অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তার দাবি, বিবিএস পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রকৃত তথ্য উঠে আসে না। আসলে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতিতেই প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।
বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির গড় হিসাবেই প্রকৃত তথ্য প্রতিফলিত হয়।’
আগের দিন বিবিএসের হালনাগাদ প্রকাশিত প্রতিবেদনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হার ৭.৫৬ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়, যা গত ৯ বছর মধ্যে সর্বোচ্চ।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে হচ্ছে গত বছরের একই মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই মাসের পার্থক্য উঠে আসে।
অন্যদিকে একটি অর্থবছরের ১২ মাসের মূল্যস্ফীতির গড় হিসাবকে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি বলা হয়।
বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘হিসাবটি করা হয়েছে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মাসিক ভিত্তিতে। এটি করতে হবে বছরের গড় হিসাবের ভিত্তিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কত বাড়ল, সেটাই প্রকৃত হিসাব।
‘এ হিসাবে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৯ শতাংশ। গড় হিসাবে মূল্যস্ফীতি এখনও সহনীয় অবস্থায় আছে।’
অবশ্য বিবিএস পয়েন্ট টু পয়েন্টের পাশাপাশি গড় মূল্যস্ফীতির হিসাবও প্রকাশ করেছে। জানানো হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬.১৫ শতাংশ।
অর্থনীতি এখনও ভালো অবস্থানেএকজন সাংবাদিক বলেন, ইউক্রেন -রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আছে কি না?
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখছি। আমাদের অর্থনীতি যতটা খারাপ অবস্থা বলে বলা হচ্ছে আসলে তা নয়। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতি এখনও অনেক ভালো অবস্থানে।
‘২০০৯ সালে যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন রিজার্ভ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। সেই রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারে গেছে। …কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
আইএফের কাছে ঋণ এখনই নয়আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর কাছে এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ প্রস্তাব দেয়া হয়নি বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হবে।...তবে এখন আমাদের ঋণ নেয়ার প্রয়োজন নেই। যখন প্রয়োজন হবে সবাইকে জানানো হবে।’
আইএমএফের সফর নিয়মিত ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘সব সময় বাংলাদেশে আসে। এটি তাদের নিয়মিত সফর। তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছে আমরা সেগুলো শুনেছি। তাদের পরামর্শগুলো খারাপ নয়। ভালো প্রস্তাবগুলো অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। তবে এমন কিছু করা হবে না, যাতে দেশের ক্ষতি হয়।
‘আমরা আইএমএফের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করব না যাতে দেশের স্বার্থের পরিপন্থি হয়। যা কিছু করা হবে দেশের মঙ্গলে।’
এশিয়ার কিছু দেশকে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। এই তালিকায় বাংলাদেশ আছে কি না-জানতে চাইলে
তিনি বলেন, ‘এশিয়ার মধ্যে নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ আছে। এই তালিকায় বাংলাদেশে আছে কি না তা আমার জানা নেই।’