বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নতুন মুখ আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমার হিসাব গণনার পদ্ধতি পাল্টানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণের যে দাবি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি করে আসছিল, এতদিন তা উপেক্ষা করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা গণনা করা হয় ক্রয়মূল্য অথবা বাজারমূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ধরে। এই পদ্ধতিতে গণনা করা ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা হয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
কোনো ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে শেয়ার কিনলে সেটির দর বেড়ে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে গেলেই তা বিক্রি করে দিতে হয়। এতে বাজারে বিক্রয়ের চাপ তৈরি হয়। আর ব্যাংক যেহেতু বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে, তাই বিক্রির চাপটাও বেশি থাকে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর প্রাধান্য বেশি। ব্যাংকের বিক্রয়চাপ তারা সামাল দিতে পারে না।
গত ৩০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে বৈঠক শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে আরেক দফা বৈঠক হবে। এরপর দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সেই বৈঠক আর হয়নি।
এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে আসে পরিবর্তন। ফজলে কবির অবসরে যাওয়ার পর গভর্নর হয়ে আসেন আবদুর রউফ তালুকদার।
তিনি পদে আসার আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ১৯ বছর পর বদলি করা হয়, যাকে পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল নীতির জন্য দায়ী করা হয়।
এর মধ্যে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এক চিঠিতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে নির্ধারণের বিষয়ে মতামত চেয়ে চিঠি দেয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে তাদের মতামত এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেবে বলে জানিয়েছেন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। বিয়য়টি পর্যালোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠক করে মতামত জানিয়ে দেয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানিয়েছে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করতে হলে আইন সংশোধনের দরকার পড়তে পারে।
তিনি বলেন, ‘যদি বিনিয়োগসীমা বাজারমূল্যে করা হয় আর শেয়ার সূচক বাড়তে থাকে তবেই বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। আর যদি সূচক কমতে থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে বির্তক থেকেই যায়।’
বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান চান ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ হোক। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিট গণনা কস্ট প্রাইসে হওয়া উচিত। যেই দামে কিনবে সেটাই তার লিমিট।’
তবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকীর মত উল্টো। তিনি বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিট বাজারমূল্যে গণনা করা উচিত। বিদ্যমান আইনেই বেশির ভাগ ব্যাংকের এখনো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা করতে চাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ক্রয়মূল্যে গণনা করার পক্ষে মতামত এলে তা বিএসইসির জন্য সাময়িক স্বস্তিদায়ক হবে। তখন প্রচার প্রোপাগান্ডা হবে এবং আবারও বেশি দামে শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির মুখে থাকার শঙ্কা রয়েছে।
‘একটা জিনিস শুধু করলেই হবে না, দীর্ঘমেয়াদে সেটা কেমন হবে তা চিন্তা করে করতে হবে।’