বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকারি হিসাবেই এখন আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় মানুষের

  •    
  • ১৯ জুলাই, ২০২২ ১৯:৪১

বিবিএসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে দিনমজুর-শ্রমিকসহ বেসরকারি পেশাজীবীরা এখন যে বাড়তি আয় করছেন, তা দিয়ে সামাল দেয়া যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির চাপ। উল্টো আরও বেশি খরচের বোঝা চাপছে মাথায়। সব মিলিয়ে মানুষের সঞ্চয় বা জীবনযাত্রার বাড়তি চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।  

সরকারি হিসাবে গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর ওই মাসে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এর অর্থ হচ্ছে, গত বছরের জুনে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই পণ্য বা সেবা পেতে এখন ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। আর যে দিনমজুর-শ্রমিক বা অন্য পেশার মানুষ গত বছরের জুনে তার শ্রমের বিনিময়ে ১০০ টাকা পেয়েছেন, চলতি বছরের জুনে তারা পেয়েছেন ১০৬ টাকা ৪৭ পয়সা।

তবে এক বছরে আয় বাড়লেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। বরং এখন ১০৬ টাকা ৪৭ পয়সা আয়ের বিপরীতে মানুষকে খরচ করতে হচ্ছে ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা।

এই হিসাব বলছে, দেশের দিনমজুর-শ্রমিকসহ বেসরকারি পেশাজীবীরা যে বাড়তি আয় করছেন, তা দিয়ে সামাল দেয়া যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির চাপ। উল্টো আরও বেশি খরচের বোঝা চাপছে মাথায়। সব মিলিয়ে মানুষের সঞ্চয় বা জীবনযাত্রার বাড়তি চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত টানা পাঁচ মাস ধরেই চলছে এ প্রবণতা। এই সময়ে দেশের মানুষের গড় মজুরি যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে জিনিসের দাম।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত জুনেও মূল্যস্ফীতির হার জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি। আগের চার মাসেও একই চিত্র ছিল দেশে।

সাধারণ সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি থাকে। তবে অর্থনীতির এই পরিচিত প্রবণতায় ছেদ ঘটেছে ফেব্রুয়ারি থেকে।

এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের জুন মাসে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম ছিল। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯০। গত এক দশকের মধ্যে সেটাই ছিল ব্যতিক্রম। তবে চলতি বছরের প্রায় গোড়া থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাবে চলছে গণ্ডগোল।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ, মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫।

পরের মাস এপ্রিলে মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছিল ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, মজুরি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

সবশেষ জুন মাসে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উঠেছে, যা ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিপরীতে এই মাসে মজুরি সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি এই তথ্যই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, দেশের মানুষ কষ্টে আছেন। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তারা।

সাধারণত মূল্যস্ফীতি ও মজুরি হার বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য ১ শতাংশের মতো হয়। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি সূচক কমপক্ষে ১ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। যখন মূল্যস্ফীতি মজুরি বৃদ্ধিকে টপকে যায়, অর্থনীতির পরিভাষায় সেটাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলা হয়ে থাকে। এখন দেশে সেটাই হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন আছে। বিবিএসের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের পণ্যমূল্যের বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যায় না।

`তারপরও বিবিএসের তথ্য মেনে নিয়েই যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলেও কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দেশের মানুষ যা উপার্জন করছে, তা দিয়ে তাদের সংসার চলছে না। মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়া সাধারণত অর্থনীতিতে দেখা যায় না। এখন সেটা হচ্ছে। এতেই প্রমাণ হয়, মানুষ কষ্টে আছে।’

তিনি বলেন, ‘৫০ টাকার কমে কোনো চাল পাওয়া যায় না বাজারে। ভোজ্যতেল, চিনি, ডালসহ সব জিনিসের দামই চড়া। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে পণ্যমূল্যে। বেড়েছে মানুষের পরিবহন খরচ।

`রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। এর জেরে বেড়ে চলা খাদ্য সংকট বিশ্বকে একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। ছোট-বড় সব দেশেই এখন মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের কী হবে কে জানে?’

অর্থনীতির আরেক গবেষক সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত মার্চ মাসে আমরা এক গবেষণা চালিয়ে দেখেছি, বিবিএসের তথ্যের চেয়ে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ।

‘তারপরও বিবিএসের বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও মজুরি সূচকের তথ্য নিয়েই যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলেও কিন্তু আমরা উদ্বেগজনক একটি তথ্য দেখতে পাচ্ছি। আর সেটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ আয় বাড়লেও মানুষের তা দিয়ে চলছে না। হয় ধার-দেনা করে চলছে; না হয় কম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি মানুষের বাড়তি আয় খেয়ে ফেলছে।

এ বিভাগের আরো খবর