নতুন সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে পুঁজিবাজারে চাপে থাকা গ্রামীণফোন বছরের ছয় মাসের জন্য ১২৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার পর দর হারিয়েছে।
সোমবার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে এই সংবাদ আসার পর এক পর্যায়ে শেয়ারদর দিনের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত নেমে গেলেও পরে অবশ্য কিছুটা দর ফিরে পায়।
শেষ পর্যন্ত ৩০ পয়সা বা ০.১ শতাংশ দর হারিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার।
আগের দিন দর ছিল ২৮৯ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার লেনদেন শুরু হয় একই দরে। এক পর্যায়ে তা উঠে যায় ২৯১ টাকা ৬০ পয়সায়। তবে পরে তা নেমে আসে ২৮৫ টাকা ৪০ পয়সায়। শেষদিকে সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে বাড়ে ৩ টাকা ১০ পয়সা।
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তাতে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা বাড়লেও নিট আয় কিছুটা কমে গেছে।
২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৭ হাজার ৪২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে গ্রামীণফোন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব বৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ।
অবশ্য পুঁজিবাজারে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেয়েছে, তাতে দেখা যায় কোম্পানিটি এই ছয় মাসে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১২ টাকা ৮২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১২ টাকা ৮৯ পয়সা।
এই ৭ পয়সা কমার কারণ প্রথম প্রান্তিকে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের ঘাটতি। এই তিন মাসে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৬ টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬ টাকা ৬০ পয়সা।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬ টাকা ৮২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬ টাকা ৩০ পয়সা।
এই হিসাবে দেখা যায় বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ১১ কোটি টাকা।
এই আয় কমার কারণ পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি। প্রধমার্ধে কোম্পানিটির পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির পরিচালন ব্যয় বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি।
দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটরটি বলেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) আরও ৯ লাখ নতুন গ্রাহক গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে, যার ফলে বছরের প্রথমার্ধ শেষে গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৬ লাখ।
মোট গ্রাহকের ৫৪.৬ শতাংশ বা ৪ কোটি ৬২ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেড়েছে।গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক বাংলাদেশের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং সময় ছিলো। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, যা ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে এবং লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প চালু করে ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছি।
‘পাশাপাশি আমরা দুর্যোগকবলিত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য একসঙ্গে কাজ করছি। কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় এ প্রান্তিকে সামগ্রিক অবস্থার ওপর বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব স্থিতিশীল রয়েছে, যার ফলে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’তিনি বলেন, ‘নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি ও তরঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা ধারাবাহিকভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। ২০২২ সালের প্রথমার্ধ শেষে আমাদের মোট ফোরজি সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪০০।
‘নেটওয়ার্ক অভিজ্ঞতার উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী পণ্যের কারণে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বছরপ্রতি ৩.২ শতাংশ এবং সর্বমোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৬ লাখে।’
গ্রামীণফোনের ফোরজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ কোটি, যা আগের বছরের তুলনায় ৩২.৭ শতাংশ বেশি।
গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রামীণফোন উদ্ভাবন, নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য আমরা অনুমোদিত সর্বোচ্চ পরিমাণ তরঙ্গ অধিগ্রহণ করেছি। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে সেবার মান শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন আরও শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে এবং বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনে অবদান রাখবে; পাশাপাশি, শহর ও গ্রামাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রামীণফোন লিমিটেড নেটওয়ার্ক কাভারেজে উন্নয়ন ও বিস্তৃতিতে ৫৬০.২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ প্রান্তিক শেষে, গ্রামীণফোনের মোট সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৩৯টি।’
২০২২ সালের প্রথমার্ধে প্রতিষ্ঠানটি কর, ভ্যাট, ডিউটি, ফি, ফোরজি লাইসেন্স এবং তরঙ্গ বরাদ্দ ফি বাবদ ৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের মোট রাজস্বের ৭৩.১ শতাংশ।