স্বর্ণের দাম আরও কমল। দশ দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের মূল্যবান এই ধাতুটির দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায় নেমে এসেছে।
অন্যান্য মানের স্বর্ণের দামও প্রায় একই হারে কমেছে। সোমবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
ঈদের আগে ৬ জুলাই সবশেষ স্বর্ণের দাম একই পরিমাণ করে কমানো হয়েছিল। রোববার পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৭৮ হাজার ৩৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানো হয়।
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ২১ মে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় বাজুস। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে স্বর্ণের দাম উঠে যায় ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায়।
২৬ মে সেই স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৬ জুলাই আরও ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস।
দশ দিনের মাথায় রোববার সন্ধ্যায় আরও ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হলো।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার থেকে এই নতুন দর কার্যকর হবে।
দাম কমানোর কারণ জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গোল্ডের দাম বেশ কিছু দিন ধরেই নিম্মমুখী। দশ দিন আগে আমরা প্রতি গ্রামে ১০০ টাকা কমিয়েছিলাম। এই কয় দিনে দাম আরও কমেছে। সে কারণে আমরা প্রতি গ্রামে আরও ১০০ টাকা করে কমিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মুহূর্তে বাজার পর্যবেক্ষণ করি। এখন বিশ্ববাজারে দাম কমছে; আমরাও কমাচ্ছি। দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে আসলে বিশ্ববাজারের ওপর।’
‘তবে সাম্প্রতিক সময়ে গোল্ডের দাম উঠানামা করছে আসলে ডলারের উত্থান-পতনের উপর। ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য মুদ্রার দামও উঠানামা করছে। সবকিছু মিলিয়েই আমাদের দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে,’ বলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আগারওয়ালা।
বিশ্ববাজারে রোববার রাত ৮টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৭০৭ ডলার ২৭ সেন্ট। এর আগে ৬ জুলাই রাতে যখন স্বর্ণের দাম কমানো হয়, তখন প্রতি আউন্সের দাম ছিল ১ হাজার ৭৬৩ ডলার ৪২ সেন্ট।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে ২ হাজার ৬০ ডলারে উঠেছিল।
১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি।
সোমবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। রোববার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৭৮ হাজার ৩৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কমেছে ১ হাজার ১৬৬ টাকা।
২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে একই পরিমাণ কমে ৭৩ হাজার ১৬৬ টাকা হয়েছে। এই দশ দিন ৭৪ হাজার ৮৮৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই মানের স্বর্ণ।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা কমে হয়েছে ৬৩ হাজার ২১৯ টাকা। রোববার পর্যন্ত ৬৪ হাজার ১৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭৫৮ টাকা কমিয়ে ৫২ হাজার ৭২১ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাজুস। এই দশ দিন ৫৩ হাজার ৪৭৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।