ঈদের পরে প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে ভাটার মধ্যে বস্ত্র খাতে দেখা গেছে চাঙাভাব। এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির দর বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনেও দেখা গেছে আগ্রহ।
একমাত্র খাত হিসেবে দেড় শ কোটির বেশি লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ২৪ শতাংশের বেশি।
১৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেনের দিনে এ খাতের ৪৬টি কোম্পানির দর বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১০টির। এছাড়া তিনটি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের দামেই।
আর কোনো খাতের লেনদেন ১০০ কোটি ছাড়ায়নি।
এরপরেই ৭০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিবিধ খাতে। ওই খাত দুটিতে লেনদেনের পরিমাণ ১১ শতাংশের বেশি।
এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা লেনদেনের ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
তবে খাতটিতে দরপতনের পাল্লা ভারী ছিল। ৭ কোম্পানির দর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ১০টির। আর আগের দামেই লেনদেন হয়েছে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার।
বিবিধ খাতে ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এ খাতেও দর পতন দেখা গেছে। মাত্র চারটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে পতন হয়েছে দশটি কোম্পানির শেয়ারের।
এছাড়া আর কোন খাতের লেনদেন ১০ শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি। ৭ শতাংশের বেশি লেনদেন করে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে প্রকৌশল ও জ্বালানি খাত।
বাকি খাতের লেনদেন ৬ শতাংশের নিচে ছিল।
শুরু থেকেই শেয়ারের দর কমার কারণে সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। তবে বেলা দুইটার কিছু আগে সূচক ওঠার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১১ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে।
ঈদের ছুটি শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম দিনের লেনদেনের চিত্র
সূচকের সঙ্গে কমেছে লেনদেন। হাতবদল হয়েছে ৬৭৯ কোটি ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার শেয়ার। ঈদের আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৮৮ কোটি ৬৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।
আজ যতগুলো শেয়ারের দাম বেড়েছে কমেছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ১২৮টি শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২০৯টির। আর আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ৪৪টি কোম্পানির শেয়ার।
ক্যাল সিকিউরিটিজের সিইও রাজেশ সাহা বলেন, ‘বস্ত্র খাতে আমাদের যে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা তা ১০ মাসেই পূরণ হয়ে গেছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় যেটা সহজে অর্জন করা সম্ভব নয় এমন। যেহেতু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে সুতরাং এই সেক্টরটা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ। এছাড়া সারা বিশ্বে সুতার দাম কমেছে। দীর্ঘ দিন থেকেই এ সেক্টরে একটা র্যালি আসবে ধরা হচ্ছিল, সেটা কিছুটা দেখা যাচ্ছে।’
সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজার নিয়েও আশাবাদী তিনি। বলেন, ‘অতীতের ইতিহাস যেটা বলে যে, আমাদের দেশের টোটাল ইকোনোমির অবস্থা যখন খারাপ হয়, বিনিয়োগের জায়গা কম থাকে, তখন শেয়ার মার্কেট ভালো হয়। আশা করা যেতে পারে আগস্টের দিকে সেটা দেখা যেতে পারে।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে ৮টিই বস্ত্র খাতের। আর শীর্ষ বিশে জায়গা করে নিয়েছে মোট ১৩টি।
তবে দর বাড়ার শীর্ষে রয়েছে গোল্ডেন সন লিমিটেড। শেয়ারটির দর বেড়েছে ১ টাকা ৭০ পয়সা বা ৯.৭৭ শতাংশ। এদিন শেয়ারটি সর্বশেষ ১৯ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
২ হাজার ২০০ বারে কোম্পানির ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার ৪৫৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এর পরেই রয়েছে নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেড। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৭০ পয়সা বা ৯.৫৭ শতাংশ। সর্বশেষ ৮ টাকা দরে লেনদেন হয়।
তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আজ কোম্পানিটির দর ৭০ পয়সা বা ৭.৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
গেইনার তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- সায়হাম টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, রিজেন্ট টেক্সটাইল, ইস্টার্ন কেবলস, ইভিন্স টেক্সটাইল ও এম এল ডায়িং লিমিটেড।
দর পতনের শীর্ষ ১০
দর পতনের শীর্ষ দশের চারটি বিমা খাতের।
সবচেয়ে বেশি দর কমেছে জনতা ইন্সুরেন্সের। ৬.৫৯ শতাংশ দর কমে সর্বশেষ ৩২ টাকা ৬০ পয়সায় হয়েছে।
৫.৫০ শতাংশ দর কমেছে প্রগতি ইন্সুরেন্সের। শেয়ারটি সর্বশেষ দর দাড়িয়েছে ৭৫ টাকা ৫০ পয়সা।
তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে নিটল ইন্সুরেন্স। ২ শতাংশ দর কমে লেনদেন হয়েছে ৪০ টাকা ১০ পয়সায়।
দরপতনের শীর্ষ তালিকার অন্য কোম্পানিগুলো হলো সোনালী পেপার, অ্যাপেক্স ফুডস, কেঅ্যান্ডকিউ লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, মনোস্পুল পেপারস, রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স ও ওরিয়ন ইনফিউশন।