যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা পূরণ করতে পারেনি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি দেখা গেছে।
ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৫৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৪১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বন্দরটিতে ঘাটতি ২১৩ কোটি টাকা।
দিন দিন রাজস্ব কমে আসার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির কথা। এ ছাড়া বন্দর পূর্ণাঙ্গ হিসেবে চালু না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার সময় রাজস্ব আয় সম্ভব হচ্ছে না সরকারে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এখনও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু না হওয়ায় সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ নেই। এ ছাড়া ভোমরার বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় সিরিয়ালের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ বেশ কয়েকটি কারণে আর তারা ভোমরা স্থলবন্দরমুখী হচ্ছেন না।
১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্যের আমদানি নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে ভোমরা স্থলবন্দরের যাত্রা।
২০১৩ সালে ওয়্যার হাউস নির্মাণের পর বন্দরটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের মর্যাদা পায়। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আদায় হয়েছে বন্দরটিতে। তারপর থেকে শুরু হয়েছে ঘাটতি।
ভেমরা স্থলবন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। তবে সব পণ্য আমদানি না হওয়া ও অবকাঠামোগত সংকটে এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বলেন, ‘এলসি করা ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে ঘোজাডাঙ্গায়। ৩০ হাজার টাকা না দিলে ট্রাক আটকে রাখা হয় দিনের পর দিন। এ ছাড়া সব পণ্য আমদানিরও সুযোগ মিলছে না, বন্দরে কিপিং লাইসেন্স না থাকার কারণে। বহুবিধ কারণে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।’
আরেক ব্যবসায়ী আল ফেরদাউস বলেন, ‘ওয়্যার হাউস নির্মিত হলেও ব্যবহৃত হচ্ছে না। তাছাড়া টার্মিনাল না থাকায় ট্রাকজট লেগেই থাকে। ৬৫টি পণ্য আমদানির অনুমতি থাকলেও আমদানি হয় ৪৭টি। তাও আবার শুল্কমুক্ত বা অল্প শুল্কে।’
ভোমরা স্থলবন্দর অন্যান্য বন্দরের তুলনায় বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন সিএন্ডএফর সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান।
তিনি বলেন, ‘কাস্টম হাউস না থাকার কারণে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমাদের এখানে আসে না। ভোমরা স্থলবন্দর অন্য বন্দরের তুলনায় বৈষম্যের শিকার। কাঁচামালের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ প্লাস-মাইনাস থাকে সব বন্দরে। কিন্তু ভোমরাতে নেই। তাই ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন না।
‘তাছাড়া ঘোজাডাঙ্গায় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে, যা বাংলাদেশের আর কোনো বন্দরে নেই। তাই ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন না। আমরা মনে করি, যদি কাস্টম হাউস উদ্বোধন হয়, আর হাই ডিউটির পণ্য আমদানির সুযোগ হয়, তবে আমরা রাজস্ব ঘাটতি থেকে উত্তরণ পাব।’
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৪৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, আগস্টে ৫৭ কোটি ৬৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৭৩ কোটি ৩০ লাখ, অক্টোবরে ৭১ কোটি ২৮ লাখ, নভেম্বরে ৭৪ কোটি ২৮ লাখ, ডিসেম্বরে ৫৫ কোটি ২৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৫৯ কোটি ২০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৬২ কোটি ৪১ লাখ, মার্চে ৯৩ কোটি ৯৮ লাখ, এপ্রিলে ৫৭ কোটি ৪৬ লাখ, মে মাসে ৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ও জুনে রাজস্ব আদায় ৪৮ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ছিল। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়নি। মূলত স্থলবন্দর ব্যবহারকারীদের পণ্য আমদানি-রপ্তানির ওপর রাজস্ব আদায় নির্ভর করে।
ভোমরা স্থলবন্দরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অবস্থানগত কারণে ভোমরা স্থলবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। পণ্য পরিবহন দ্রুত সময়ে যাবে। তাই সরকার ভোমরা স্থলবন্দরের বিভিন্ন বিষয় খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ চলমান রয়েছে।’
তিনি জানান, ভোমরা স্থলবন্দরের বিভিন্ন কার্যক্রম এখন এনালগ পদ্ধতির পরিবর্তে অটোমেশন পদ্ধতিতে হচ্ছে।