কোরবানির ঈদে মাংসের অন্যতম অনুষঙ্গ সালাদ। আর এই সালাদ তৈরির অন্যতম উপকরণ শসা, টমেটো, গাজর ও কাঁচা মরিচ। ঈদের পরের দিনের কাঁচাবাজারে তাই প্রভাব পড়েছে সালাদের উপকরণের দামে। শুধু সালাদের উপকরণ নয়, জোগান কম থাকায় অন্যান্য সবজির দামও বাড়তি।
রাজধানীর মগবাজার-কারওয়ান বাজার ঘুরে সোমবার দেখা যায়, অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে শসা ও কাঁচা মরিচের। আর টম্যাটো ও গাজরের দামও কিছুটা বাড়তি। ক্রেতারা যাকে বলছেন আকাশছোঁয়া দাম। আর বিক্রেতারা বলছেন, ‘জোগান’ কম থাকায় দামের এই আকাশচুম্বী অবস্থা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, যা ঈদের আগের দিনও ছিল ১২০ টাকা। এই হিসাবে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। একই অবস্থায় পড়তে হচ্ছে শসা কিনতেও। কারণ ঈদের আগের দিন যে শসা বিক্রি হয়েছে ৫০/৬০ টাকা কেজিতে, তা এখন মিলছে ১২০ টাকায়।
তবে টম্যাটো ও গাজরের দাম দ্বিগুণ না হলেও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ ও ১২০ টাকায়, যা আগে ছিল কেজিপ্রতি ১২০ ও ৮০ টাকা।
সালাদের উপকরণের এই আকাশছোঁয়া দামে বিরক্ত ক্রেতারা। যাকে তারা দেখছেন ঈদের পরের বিক্রেতার ফায়দা হিসেবে।
কারওয়ান বাজারে দেখা হয় সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদের সঙ্গে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘অবস্থা দেখেছেন? কাঁচা মরিচের কেজি ২৪০ টাকা। দেশে কি দুর্ভিক্ষ হলো নাকি?’
পাশেই থাকা বিক্রেতা তৎক্ষণাৎ জবাব দেন, ‘স্যার, মাল আসে নাই। আমরা কী করুম?’
আবার তৌফিক আহমেদের জবাব, ‘তোমাদের এ অজুহাত আমরা প্রতি ঈদের পরদিনই শুনি। আসলে ঈদের কথা বলে তোমাদের ফায়দা নেয়ার চেষ্টা।’
একই সুরে কথা বললেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সব সবজির দামই বাড়তি। বাজার করাই কঠিন হয়ে পড়ছে দিন দিন।’
যদিও ক্রেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিক্রেতারা। তাদের ভাষ্য, জোগান কম থাকায় দামের এ ঊর্ধ্বগতি ।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মাহবুব বলেন, ‘গতকাল রাতে মাত্র এক ট্রাক মাল এসেছে। এ জন্যই সব সবজির দাম বেশি।’
দুই-তিন দিন পর সব সবজির দাম কমে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।
একই ধরনের মন্তব্য করলেন মগবাজারের সবজি বিক্রেতা তোফায়েল। তিনি বলেন, ‘ভাই, বাজারে তো মালই (সবজি) নাই, দাম তো বাড়বেই।’ কাঁচা মরিচ, শসা, টম্যাটো ও গাজরের মতো দ্বিগুণ না বাড়লেও অন্যান্য সব সবজির দামও বাড়তি। প্রায় সব সবজিই কেজিতে ১০/২০ টাকা করে বেড়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৩০ টাকা।
এ ছাড়া পেঁপে ৩০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৩০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, লেবু প্রতি ডজন ৮০ টাকা, কাঁচা কলা ৩০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগিরব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকায়, যা ঈদের আগের দিনও (শনিবার) ছিল ১৪৫-১৫০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা, খাসি ৯৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজার ফাঁকা
সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় কারওয়ান বাজারের মাছ বাজার বন্ধ। তবে বাজারের বাইরে কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা ইলিশ ও রুই মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দাম জানতে চাইলে তারা জানান, প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকা আর রুই ৫০০ টাকা।
মগবাজারের অবস্থাও একই রকম। হাতেগোনা কয়েকজন দোকানি রুই, ইলিশ, কই আর তেলাপিয়া মাছ বিক্রি করছেন।
দাম জানতে চাইলে মগবাজারের মাছ বিক্রেতা ইসমাইল বলেন, ‘আড়তে মাছ নেই। সাধারণত কারওয়ান বাজারের আড়ত থেকে মাছ কিনি। আজ যাত্রাবাড়ী থেকে কিনছি, তাই দাম একটু বেশি।’